গীতাঞ্জলি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১০১-১০৫
১০১
হে মোর দেবতা, ভরিয়া এ দেহ প্রাণ
কী অমৃত তুমি চাহ করিবারে পান।
আমার নয়নে তোমার বিশ্বছবি
দেখিয়া লইতে সাধ যায় তব কবি,
আমার মুগ্ধ শ্রবণে নীরব রহি
শুনিয়া লইতে চাহ আপনার গান।
হে মোর দেবতা, ভরিয়া এ দেহ প্রাণ
কী অমৃত তুমি চাহ করিবারে পান।
আমার চিত্তে তোমার সৃষ্টিখানি
রচিয়া তুলিছে বিচিত্র এক বাণী।
তারি সাথে প্রভু মিলিয়া তোমার প্রীতি
জাগায়ে তুলিছে আমার সকল গীতি,
আপনারে তুমি দেখিছ মধুর রসে
আমার মাঝারে নিজেরে করিয়া দান।
হে মোর দেবতা, ভরিয়া এ দেহ প্রাণ
কী অমৃত তুমি চাহ করিবারে পান।
১০২
এই মোর সাধ যেন এ জীবনমাঝে
তব আনন্দ মহাসংগীতে বাজে।
তোমার আকাশ, উদার আলোকধারা,
দ্বার ছোটো দেখে ফেরে না যেন গো তারা,
ছয় ঋতু যেন সহজ নৃত্যে আসে
অন্তরে মোর নিত্য নূতন সাজে।
তব আনন্দ আমার অঙ্গে মনে
বাধা যেন নাহি পায় কোনো আবরণে।
তব আনন্দ পরম দুঃখে মম
জ্বলে উঠে যেন পুণ্য আলোকসম,
তব আনন্দ দীনতা চূর্ণ করি’
ফুটে উঠে ফেটে আমার সকল কাজে।
১০৩
একলা আমি বাহির হলেম
তোমার অভিসারে,
সাথে সাথে কে চলে মোর
নীরব অন্ধকারে।
ছাড়াতে চাই অনেক করে
ঘুরে চলি, যাই যে সরে,
মনে করি আপদ গেছে,
আবার দেখি তারে।
ধরণী সে কাঁপিয়ে চলে—
বিষম চঞ্চলতা।
সকল কথার মধ্যে সে চায়
কইতে আপন কথা।
সে যে আমার আমি, প্রভু,
লজ্জা তাহার নাই যে কভু,
তারে নিয়ে কোন্ লাজে বা
যাব তোমার দ্বারে।
১০৪
আমি চেয়ে আছি তোমাদের সবাপানে।
স্থান দাও মোরে সকলের মাঝখানে।
নীচে সব নীচে এ ধূলির ধরণীতে
যেথা আসনের মূল্য না হয় দিতে,
যেথা রেখা দিয়ে ভাগ করা নেই কিছু
যেথা ভেদ নাই মানে আর অপমানে,
স্থান দাও সেথা সকলের মাঝখানে।
যেথা বাহিরের আবরণ নাহি রয়,
যেথা আপনার উলঙ্গ পরিচয়।
আমার বলিয়া কিছু নাই একেবারে,
এ সত্য যেথা নাহি ঢাকে আপনারে,
সেথায় দাঁড়ায়ে নিলাজ দৈন্য মম
ভরিয়া লইব তাঁহার পরম দানে।
স্থান দাও মোরে সকলের মাঝখানে।
১০৫
আর আমায় আমি নিজের শিরে
বইব না।
আর নিজের দ্বারে কাঙাল হয়ে
রইব না।
এই বোঝা তোমার পায়ে ফেলে
বেড়িয়ে পড়ব অবহেলে—
কোনো খবর রাখব না ওর,
কোনো কথাই কইব না।
আমায় আমি নিজের শিরে
বইব না।
বাসনা মোর যারেই পরশ
করে সে,
আলোটি তার নিবিয়ে ফেলে
নিমেষে।
ওরে সেই অশুচি, দুই হাতে তার
যা এনেছে চাই নে সে আর,
তোমার প্রেমে বাজবে না যা
সে আর আমি সইব না
আমায় আমি নিজের শিরে
বইব না।
সূত্র : রবীন্দ্র রচনাবলি, কাব্যগ্রন্থ : গীতাঞ্জলি
ধারাবাহিকভাবে পড়তে ক্লিক করুন
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১-৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬-১০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১-১৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৬-২০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ২১-২৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ২৬-৩০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৩১-৩৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৩৬-৪০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৪১-৪৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৪৬-৫০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৫১-৫৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৫৬-৬০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬১-৬৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬৬-৭০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৭১-৭৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৭৬-৮০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৮১-৮৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৮৬-৯০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৯১-৯৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৯৬-১০০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১০১-১০৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১০৬-১১০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১১-১১৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১৬-১২০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১২১-১২৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১২৬-১৩০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৩১-১৩৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৩৬-১৪০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৪১-১৪৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৪৬-১৫০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৫১-১৫৭
৫ thoughts on “গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১০১-১০৫”