Sahittya

Literature magazine | Bangla & english worldwide

Gitanjali : Rabindranath Tagore

Gitanjali : Rabindranath Tagore

গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৪১-৪৫

গীতাঞ্জলি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৪১-৪৫

৪১
এই মলিন বস্ত্র ছাড়তে হবে
হবে গো এইবার—
আমার এই মলিন অহংকার।
দিনের কাজে ধুলা লাগি
অনেক দাগে হল দাগি,
এমনি তপ্ত হয়ে আছে
সহ্য করা ভার।
আমার এই মলিন অহংকার।

এখন তো কাজ সাঙ্গ হল
দিনের অবসানে,
হল রে তাঁর আসার সময়
আশা এল প্রাণে।
স্নান করে আয় এখন তবে
প্রেমের বসন পরতে হবে,
সন্ধ্যাবনের কুসুম তুলে
গাঁথতে হবে হার।
ওরে আয় সময় নেই যে আর।

৪২
গায়ে আমার পুলক লাগে,
চোখে ঘনায় ঘোর,
হৃদয়ে মোর কে বেঁধেছে
রাঙা রাখীর ডোর।
আজিকে এই আকাশতলে
জলে স্থলে ফুলে ফলে
কেমন করে মনোহরণ
ছড়ালে মন মোর।

কেমন খেলা হল আমার
আজি তোমার সনে।
পেয়েছি কি খুঁজে বেড়াই
ভেবে না পাই মনে।
আনন্দ আজ কিসের ছলে
কাঁদিতে চায় নয়নজলে,
বিরহ আজ মধুর হয়ে
করেছে প্রাণ ভোর।

৪৩
প্রভু, আজি তোমার দক্ষিণ হাত
রেখো না ঢাকি।
এসেছি তোমারে, হে নাথ,
পরাতে রাখী ।
যদি বাঁধি তোমার হাতে
পড়ব বাঁধা সবার সাথে,
যেখানে যে আছে কেহই
রবে না বাকি।

আজি যেন ভেদ নাহি রয়
আপনা পরে,
তোমায় যেন এক দেখি হে
বাহিরে ঘরে।
তোমার সাথে যে বিচ্ছেদে
ঘুরে বেড়াই কেঁদে কেঁদে,
ক্ষণেক-তরে ঘুচাতে তাই
তোমারে ডাকি।

৪৪
জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ।
ধন্য হল ধন্য হল মানবজীবন।
নয়ন আমার রূপের পুরে
সাধ মিটায়ে বেড়ায় ঘুরে,
শ্রবণ আমার গভীর সুরে
হয়েছে মগন।

তোমার যজ্ঞে দিয়েছ ভার
বাজাই আমি বাঁশি।
গানে গানে গেঁথে বেড়াই
প্রাণের কান্নাহাসি।
এখন সময় হয়েছে কি।
সভায় গিয়ে তোমায় দেখি
জয়ধ্বনি শুনিয়ে যাব
এ মোর নিবেদন।

৪৫
আলোয় আলোকময় ক’রে হে
এলে আলোর আলো।
আমার নয়ন হতে আঁধার
মিলালো মিলালো।
সকল আকাশ সকল ধরা
আনন্দে হাসিতে ভরা,
যে দিক-পানে নয়ন মেলি
ভালো সবই ভালো।

তোমার আলো গাছের পাতায়
নাচিয়ে তোলে প্রাণ।
তোমার আলো পাখির বাসায়
জাগিয়ে তোলে গান।
তোমার আলো ভালোবেসে
পড়েছে মোর গায়ে এসে,
হৃদয়ে মোর নির্মল হাত
বুলালো বুলালো।

সূত্র : রবীন্দ্র রচনাবলি, কাব্যগ্রন্থ : গীতাঞ্জলি

ধারাবাহিকভাবে পড়তে ক্লিক করুন
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১-৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬-১০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১-১৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৬-২০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ২১-২৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ২৬-৩০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৩১-৩৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৩৬-৪০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৪১-৪৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৪৬-৫০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৫১-৫৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৫৬-৬০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬১-৬৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬৬-৭০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৭১-৭৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৭৬-৮০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৮১-৮৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৮৬-৯০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৯১-৯৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৯৬-১০০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১০১-১০৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১০৬-১১০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১১-১১৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১৬-১২০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১২১-১২৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১২৬-১৩০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৩১-১৩৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৩৬-১৪০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৪১-১৪৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৪৬-১৫০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৫১-১৫৭

About The Author

সম্পাদক

Jebunnahar Joni

জেবুননাহার জনি। Jebunnahar joni. কবি ও গল্পকার। জন্ম : ১১ জানুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ; পৈতৃকনিবাস মাদারীপুর। পিতা : আতাউর রহমান হাওলাদার, মাতা : নুরুননাহার খান। সমাজকল্যাণে বিএ সম্মানসহ এমএ। পেশা : শিক্ষকতা। লেখার বিষয় : কবিতা ও গল্প। প্রকাশিত গ্রন্থ : মেঘলা রাতে চাঁদ (গল্প, ২০০৭), বিরান পথের কাশবন (কবিতা, ২০১৭)। পুরস্কার : গাংচিল সাহিত্য পুরস্কার (২০১১), সমধারা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)।