Sahittya

Literature magazine | Bangla & english worldwide

The path of love : Osho Rajneesh

The path of love : Osho Rajneesh

দি পাথ অব লাভ : ওশো রজনীশ : ২

The path of love : Osho Rajneesh

প্রেমের সরল পথ (দি পাথ অব লাভ) : ওশো রজনীশ

অনুবাদ : শুভ্র চৌধুরী

 

একটি প্রকৃত ধর্ম ইতিবাচক হতে বাধ্য। জেসাস ইতিবাচক, ভীষণভাবে জীবনপ্রেমিক; খ্রিস্টানরা জীবনের প্রতি ইতিবাচক নয়। নেচে, গেয়ে, ভালোবেসে কৃষ্ণ ছিলেন জীবনের প্রতি ইতিবাচক। হিন্দুরা জীবনের প্রতি ইতিবাচক নয়। তাদের তথাকথিত মহাত্মাগণ, তাদের তথাকথিত সাধকগণ, এরা সবাই জীবনের প্রতি নেতিবাচক, বিষয়স্বরূপ।

যদি ধর্ম আসে তোমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা হিসেবে, তুমি সর্বদা এই পার্থক্যটি দেখতে পাবে : তোমার ধর্ম হবে জীবনের প্রতি ইতিবাচক। তুমি জীবনকে হ্যাঁ বলবে, আর তা বলবে পরিপূর্ণরূপে। তুমি একজন ইতিবাচক মানুষে পরিণত হবে, আর এর মাধ্যমে তোমার ভেতরে ইতিবাচক ঈশ্বরের প্রবেশ ঘটবে।

আর যদি তোমার ধর্ম শর্তাধীন হয়—যা ধার করা, সস্তা, অনুকল্প, অনুকরণপ্রবণ—তখন এটি হবে জীবনের প্রতি নেতিবাচক। তুমি ভয় নিয়ে বেঁচে থাকবে, তুমি সবসময় নিজেকে পাপী ভাববে, তুমি সবসময় এই ব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকবে যে কি করবো আর কি করবো না : ‘এটা কি ঠিক? নাকি এটা ভুল? এটা কি ভালো? নাকি এটা খারাপ?’

ধার করা ধর্ম কখনো নৈতিকতার সীমাকে অতিক্রম করতে পারে না। প্রকৃত ধর্ম হচ্ছে অনৈতিক। এটি সর্বদাই নৈতিকতা তথা ভালো-মন্দের ধারণার ঊর্ধ্বে। এটি কোনো পার্থক্য জানে না। যদি তুমি এটি বুঝো, তুমি কবিরের অনুপম সুন্দর সূত্রগুলোকে বুঝতে সক্ষম হবে। তিনি হিন্দু ছিলেন না, না মুসলিম, না খ্রিস্টান। তিনি ছিলেন একজন খাঁটি মানুষ। আর তার কথাগুলো ছিল পৃথিবীর বিশুদ্ধতম বাণী। আর তিনি কোনো কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন না—তিনি যা অনুভব করতেন, আপোসহীনভাবে তাই বলে যেতেন।

সূত্রসমূহে প্রবেশের আগে দুই তিনটি বিষয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধর্মসমূহ টিকে আছে এই ধারণা নিয়ে যে, জীবন বিসর্জন করে, জীবন থেকে পলায়ন করে, সন্ন্যাসী হয়ে, তপস্বী হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। যেন জীবিত থাকা একটা পাপ, একটা শাস্তি। এই কারণে তথাকথিত ধার্মিকগণ সর্বদা ভাবে যে, পূর্বজন্মের পাপের ফলস্বরূপ এই জীবন দেয়া হয়েছে। এটা হিন্দুদের কনসেপ্ট। খ্রিস্টানদের কনসেপ্ট তোমার নিজেকে আরো বড় পাপী ভাবতে সহায়তা করবে। কারণ আদম স্রষ্টার আদেশ অমাণ্য করেছিল। তাই সকল মানুষের শুরুই পাপ থেকে। তোমরা হলে আজন্ম পাপী।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বলে যে, জীবন হচ্ছে একটা বন্ধন; তাই যত দ্রুত সম্ভব এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জীবন থেকে পলায়ন করো! শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৃথিবীজুড়ে একটি প্রার্থণাই সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে—‘আমাদেরকে পুনরায় পৃথিবীতে প্রেরণ করো না।’

কবির বলেন, আমি আত্মবিসর্জনের জন্য এই পৃথিবীতে আসিনি। যদি স্রষ্টা এই পৃথিবী সৃষ্টি করে থাকেন, এই পৃথিবী সুন্দর। আর যদি এটি স্রষ্টা ছাড়া আর কেউ সৃষ্টি করে থাকে, তবু এটি সুন্দর। এটি কোনো শাস্তির জায়গা হতে পারে না, এটি মানুষের জন্য একটি পুরস্কারের জায়গা। এটি একটি চরম বৈপ্লবিক বিবৃতি যে, এই পৃথিবী মানুষের জন্য শাস্তিস্বরূপ নয়, বরং পুরস্কারস্বরূপ দেয়া হয়েছে; পরম প্রভূ মানুষকে কোনো গভীর অন্ধ কুঠুরিতে নিক্ষেপ করেননি। এটি একটি উদযাপন। তোমাদের প্রতি পরম প্রভূর যে অপরিসীম ভালোবাসা তার প্রকাশ স্বরূপ তিনি এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, লীলাস্বরূপ, নৃত্যস্বরূপ। এটি একটি মহা-উদযাপন।

প্রথম কথা হলো, কবির আত্মবিসর্জনের পক্ষে নন। বরং উদযাপনের পক্ষে। দ্বিতীয়ত, কবির বলেন, জীবন হচ্ছে সমাজে। জীবন মানেই সমাজ। তাই দুনিয়া থেকে পলায়নের চেষ্টা করো না। নির্জনবাসী হবার চেষ্টা করো না। কারণ সমৃদ্ধি সমাজের মাঝে; সমাজের দ্বারা, সম্পর্কগুলোর দ্বারা তুমি সমৃদ্ধ হয়ে থাকো। তুমি মানুষের সাথে যত বেশি সম্পৃক্ত হবে, তত বেশি সমৃদ্ধ হবে। হিমালয়ের নির্জন গুহায় বসবাসরত একজন মানুষ নিতান্তই দরিদ্র, নিঃস্ব। কারণ সম্পর্কের নদীসমূহ তার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় না। সে মরুভূমিতে পরিণত হয়।

যখনই কোনো মানুষ তোমার দিকে দৃষ্টিপাত করে, তখনই তোমার মধ্য দিয়ে একটা নদী বয়ে যায়। যখনই কেউ তোমার সাথে হাত মিলায়, তখনই তোমার ভেতরে একটি শক্তি নড়েচড়ে উঠে। যতবার মানুষের সাথে তোমার সংযোগ হয় ততবার তুমি কিছু একটা প্রাপ্ত হও। যখনই তুমি সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দাও, সম্পর্কগুলো ছিন্ন করে দাও এবং হিমালয় গুহার একজন সন্ন্যাসী বনে যাও; তখন মূলত তুমি আত্মহত্যার পথ বেছে নাও। বলা যায়, তখন তুমি একশ ভাগের এক ভাগ জীবিত। নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের কারণে তোমাকে কিছুটা জীবিত বলা যায়। এটা এক ধরনের মৃত্যু। সর্বনিম্ন পর্যায়ের বেঁচে থাকা। তুমি পরিপূর্ণরূপে বাঁচতে পারছ না। তুমি অনিচ্ছাকৃতভাবে বেঁচে আছো। তুমি একটা গুরুতর অভিযোগ নিয়ে বেঁচে আছো যে, তুমি বাঁচতে চাও না, কিন্তু তোমাকে বেঁচে থাকতে জোর করা হচ্ছে। তুমি এই পৃথিবীকে একেবারেই চাও না : রংধনু এবং বৃক্ষসমূহ এবং তারকারাজি এবং মানুষজন… না, তুমি কারো সাথেই সম্পর্কযুক্ত হতে চাও না।

যখন তুমি কারো সাথেই সম্পর্ক রাখতে চাও না, পরমেশ্বরের সাথে তোমার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যখন তুমি একজন মানুষের সাথে সম্পর্কযুক্ত হও অথবা একটি বৃক্ষের সাথে অথবা একটি পশুর সাথে, তুমি বিভিন্নভাবে পরমেশ্বরের সাথে সংযুক্ত হও।

কবির বলেন, সত্যিকারভাবে বেঁচে থাকার একমাত্র পথ হচ্ছে সমাজবদ্ধ থাকা। সম্পর্ক হচ্ছে জীবন এবং সম্পর্ক হচ্ছে সৌন্দর্য।

কবিরের তৃতীয় কথা হলো : ধর্মকে আচারসর্বস্ব করো না। আচার হচ্ছে ধর্মকে এড়িয়ে যাওয়ার একটা পন্থা। ধর্ম হওয়া উচিত স্বতঃস্ফূর্ত, আচার বহির্ভূত। তোমার তখনই এটা করা উচিত, যখন তুমি এটা করতে ভালোবাসবে—এমন না যে এটা একটা ডিউটি আর তোমার এটা করা উচিত স্বতঃস্ফূর্তভাবে, যখন তোমার হৃদয় এটা করাকে পছন্দ করবে। এ জন্য নিয়ম করে প্রতিদিন মসজিদ কিংবা মন্দিরে যাবার প্রয়োজন নেই। এ জন্য প্রতিদিন একই নিয়মে বারবার প্রার্থনা করার প্রয়োজন নেই, কারণ তুমি যদি একই প্রার্থনা বাণী প্রতিদিন আওড়াও, তবে তুমি তা সচেতনভাবে করবে না। এটা হয়ে যাবে যান্ত্রিক।

আমি শুনেছি…

এটা ঘটেছিল : একজন জার্মান পণ্ডিত ইন্ডিয়ায় এসেছিলেন একজন বৃদ্ধ সাধকের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে। তার নাম খুব বিখ্যাত ছিল, কারণ তার ঋগবেদ পুরোটাই মুখস্থ ছিল। তিনি পুরো ঋগবেদ মুখস্থ করেছিলেন; এতে তার খ্যাতি ছিল। আমি মনে করি না যে তিনি একজন সাধক ছিলেন; তাকে বলা যায় একজন বড় পণ্ডিত, যার স্মৃতিশক্তি খুব ভালো ছিল। তোমরা তাকে বড়জোর একটি ভালো কম্পিউটার বলতে পারো, কিন্ত সাধক নয়।

আর এই জার্মান পণ্ডিত কিছু বিষয় আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। তিনি তাকে ঋগবেদ থেকে কিছু সূত্র বলেছিলেন, ‘আমি এই সূত্রসমূহ সম্পর্কে আপনার সাথে কিছু আলোচনা করতে চাই।’

বৃদ্ধ লোকটি বলল, ‘ইতিঃপূর্বে এই সূত্রসমূহ কখনো শুনি নাই।’ কারণ শুরুতে জার্মান পণ্ডিত বলেন নাই যে এগুলো ঋগবেদের শ্লোক।

বৃদ্ধ লোকটি বলল, ‘আগে কখনো এসব শুনি নাই।’

জার্মান লোকটি বিস্মিত হলেন। তিনি বললেন, ‘আমি শুনেছি যে আপনি পুরো ঋগবেদ জানেন, অথচ আপনি বলছেন যে, এগুলো কখনো শুনেননি!’
সে বলল, ‘আমি খণ্ড খণ্ড ভাবে মনে করতে পারি না। আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো চেইনটা মনে করতে পারি। তুমি যদি মাঝখান থেকে দুইটা শ্লোক মনে করতে বলো আমি তা পারব না।’

এরকম অনেক সময়ই ঘটে থাকে : তুমি পুরোটাকে পুনরাবৃত্তি করতে পারো খুব সহজে, কারণ এর জন্য সচেতন থাকার প্রয়োজন হয় না; এটা হচ্ছে একটা যান্ত্রিক পুনরাবৃত্তি, জাস্ট একটা টেপ রেকর্ডারকে বারবার চালানো। এটা একটা গ্রামোফোনের মতো। যদি হঠাৎ করে এর মাঝখান থেকে তোমাকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়, তোমার মনে হবে যেন তুমি এই ব্যাপারে কিছুই জানো না, কারণ এটা কনটেক্সটের বাইরে। তুমি ধর্মীয় আচার পরিপালন করতে পারো : তুমি প্রতিদিন মসজিদে যেতে পারো, নামাজ করতে পারো—যা কিনা ইসলামের যোগ সাধনা; অথবা তুমি কোনো হিন্দু আচার পালন করতে পারো, অথবা অন্য কোনো ধর্মীয় আচার; অথবা তুমি নিজেই কোনো ধর্মীয় আচার আবিষ্কার করে নিতে পারো এবং ধার্মিকতার সাথে প্রতিদিন তা পালন করতে পারো এবং এটা তোমার অভ্যাসে পরিণত হতে পারে। আর এতে তোমার সত্ত্বায় কোনো উন্নতি আসবে না মোটেই।

কবির বলেন, স্বতঃস্ফূর্ত হও। যদি তুমি নীরবে বসে থাকো, আর সেই মুহূর্তে প্রার্থনার উদয় হয়, তবে তা করো—কোনো আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন নেই। তোমার যা প্রার্থনা করতে মন চায়, যেভাবে মন চায়—সেভাবেই করো।

(চলবে)

 

The path of love : Osho Rajneesh. প্রেমের সরল পথ (দি পাথ অব লাভ) : ওশো রজনীশ

ধারাবাহিকভাবে পড়তে বিষয়ে ক্লিক করুন

দি পাথ অব লাভ – ১
দি পাথ অব লাভ – ২
দি পাথ অব লাভ – ৩
দি পাথ অব লাভ – ৪
দি পাথ অব লাভ – ৫

পরবর্তী কিস্তি পর্যায়ক্রমে আসছে…

About The Author

সম্পাদক

Jebunnahar Joni

জেবুননাহার জনি। Jebunnahar joni. কবি ও গল্পকার। জন্ম : ১১ জানুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ; পৈতৃকনিবাস মাদারীপুর। পিতা : আতাউর রহমান হাওলাদার, মাতা : নুরুননাহার খান। সমাজকল্যাণে বিএ সম্মানসহ এমএ। পেশা : শিক্ষকতা। লেখার বিষয় : কবিতা ও গল্প। প্রকাশিত গ্রন্থ : মেঘলা রাতে চাঁদ (গল্প, ২০০৭), বিরান পথের কাশবন (কবিতা, ২০১৭)। পুরস্কার : গাংচিল সাহিত্য পুরস্কার (২০১১), সমধারা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)।