Sahittya

Literature magazine | Bangla & english worldwide

samir ahmed

samir ahmed

বই সিরিজ : সমীর আহমেদ

বই সিরিজ
সমীর আহমেদ


একটি অন্ধকার ঘরে আটকে ছিলাম আমি। নিজেকেই নিজে দেখতে পেতাম
না তখন। তুমি একদিন খুলে দিলে সব দরোজা-জানালা। ভেতরের,
বাহিরের। অনেক মুগ্ধতায় নিজেকে দেখলাম প্রথম। আলো! আলো! এতো
আলো আছে পৃথিবীতে! ঈসার স্পর্শে একজন জন্মান্ধ প্রথম চোখে দেখার
আনন্দে যেভাবে নেচে উঠেছিল, আমার ভেতরে মুহূর্তে বিদ্যুৎচমকের মতো
খেলে গেল সে-রকম শিহরণ। আমি অবাক চোখে গাছপালা, পশু-পাখি-মানুষ
দেখলাম। পাহাড়-সাগর-নদী দেখলাম। আরও দেখলাম অবারিত নীল
আকাশ, ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ, উড়ন্ত পাখির ঝাঁক। চারদিকে কতো রূপ, কতো
যে সৌন্দর্য তার! আমি চিৎকার করে বললাম, এ সবকিছু আমার! কিংবা আমি
তাহাদের। সেদিন থেকে এ পৃথিবী আমার স্বদেশ।


এতো ঢেউয়ের কোলাহল নিয়ে কীভাবে ঘুমাও তুমি? আমি তো দু-একটি ঢেউয়ের
ধাক্কায় খরকুটার মতো ভেসে যাই, ভেসে যাই কেবল দূর অজানায়। কোন বেলাভূমি
আমার জন্য শান্ত জলের আঁচল বিছিয়ে রেখেছে, কোন সবুজ দ্বীপের তাল-নারকেল
গাছের সারি তোমার ঢেউয়ের চূড়ার সব স্পর্ধা উপেক্ষা করে আমার জন্য রয়েছে দাঁড়িয়ে,
জানি না। আমি শুধু অনাবিল আনন্দে ভেসে যাই। ভেসে যেতে যেতে সময় সুরঙ্গে ঢুকে
পড়ি। সভ্যতা শুরুরও আগে দেখি সংগ্রামী মানুষের মুখ অহঙ্কার ও আত্মবিশ্বাসে কতটা
দীপ্র। প্রাচীন নগরীর সব রাজপ্রাসাদের চূড়া থেকে মানুষের অমর কীর্তিগুলো গেঁথে রাখি
চোখের তারায়। নর্তকীর নিপুণ নিক্কনের ধ্বনি, রাজসিক ললনাদের হাসির ফুয়ারা ফিনফিনে
বাতাসের পর্দা সরিয়ে এ বুকের ভেতর ঢুকে আজও টুকা মারে। নগরীর পথে পথে হেঁটে ধুলো
থেকে মুক্তোর মতো খুচরা অশ্রু ফোঁটাগুলো তুলে রাখি বুক পকেটে। মুক্তবাজারে এসব বিক্রি
করে ডিজিটালে পা রেখে ছুটে যাচ্ছি কোথায়? প্রিয়তম বিষময় এই গ্রহ কি ঘুমাতে যাবে এবার?
কেন এতো নীরব থাকো? তুমি কি কোনোদিন দেবে না এর সঠিক উত্তর?


প্রতœ নগরীর বিধ্বস্ত প্রাসাদ থেকে ধুলোর আস্তর সরিয়ে তুলে আনি তোমাকে।
বয়সের ভারে জরাজীর্ণ তুমি। কালের ঘুনপোকা খেয়ে গেছে তোমার শরীর।
পরম যতেœ বুকে তুলে নিলেও ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ো। শরীরের ভাঁজ খুললেই
দুর্বোধ্য সজীব শব্দরা কোলাহল করে ঠেলা মারে বোধের বৈঠায় । এই যে
জ্ঞানের নাও অন্ধকার গহ্বর থেকে আলোতে এসে—রাতের উজানে যায়, তোমার
ধ্রুপদী সুরে তুলে ভবিষ্যতের গান। গোপনে তোমার বন্দরে সে ফেলে রাখে মিলন
নোঙ্গর। ভাষার জটিল পাকে পাকে তুলে ধরো অতীত মানব কীর্তির কোলাজ।


গুহা থেকে পাথর, পশুর ছাল, গাছের বাকল, পাতা থেকে এই তো সেদিন
কাগজপাখির বুকে নিয়েছো ওম। আজ আলোর অভিক্ষেপে ভেসে ওঠে তোমার
মুখ সিলিকন আয়নায়। ইথারে ইথারে ভেসে বহু বর্ণ ও রেখায় পলকে উড়ে
যাও দেশ-দেশান্তর। আলাদীনের জাদুর প্রদীপ পারেনি যা, তুমি তা হয়ে যাও
মুহূর্তের ভেতর। তোমার বুকের ভাঁজ খুলে যদিও আমি আজও হই বদ্ধ মাতাল,
কিন্তু তোমাকে পাই না কাছে সেই আগের মতো। বায়বীয় ছায়ায় আপন অবয়ব ভেঙে
কোথায় হারাও তুমি? এতো কাছে থাকো, হাতের মুঠোয়, বুকের খুব কাছে, তবু
যেন সীমাহীন দূর—গন্ধ-স্পর্শ ও অবয়ববিহীন। তুমি ওড়বে, তুমি ঘুরবে। তোমার
বুকে রবে ভাষা ও শব্দের তুমুল কোলাহল, অবয়বে তোমাকে পাবে না শুধু আগামী মানুষ।


এ বুক আমুল বিদ্ধ করার জন্য বিশ্বস্ত বন্ধুও গোপনে শান দেয় স্বার্থের ছুরি। মাঝে মাঝে
সে ধার পরীক্ষা করে। আমি টের পাই। ভয়ে গা কাটা দিয়ে ওঠে। ও-ফলায় বিদ্ধ হওয়ার
আগে আমি কি যেতে পারি না কোথাও? কোথায় যাবো? আমার চারপাশে তাক করা বিদ্বেষের
বিষাক্ত বারুদ। সুযোগ পেলেই আমাকে এ- ফোঁড় ও-ফোঁড় করে। যন্ত্রণায় নীল নিশ্চুপ হয়ে রই।
এই নৈঃশব্দ্যের দেয়াল ভেঙে তুমিই নিয়েছো তুলে আমার সব ঘৃণা ও বিষাদ। একটু সুখ ও স্বস্তির
খোঁজ তুমি ছাড়া কোনোদিন দেয়নি তো কেউ! তোমার আয়তাকার পবিত্র ভূমিতে দাঁড়ালে খুলে
যায় সব শান্তির দরোজা।


কারখানার কালিঝুলি, ঘামগন্ধও ভুলে যাই তোমাকে পেলে। গোলাপে মুগ্ধ
হই বটে, বিত্তেও মেটাই মৌল প্রয়োজন। কিন্তু কখনো তা মোহগ্রস্ত করে না
তোমার মতো। তুমি কাছে এলেই চিত্ত নৃত্য করে অপার্থিব সুখে। চারপাশে
ছড়িয়ে পড়ে মৃগনাভীর মনোহর সৌরভ। তোমার বুকের কালো বর্ণ আমাকে
যা দিতে পারে, কস্মিনকালেও পারেনি তা দিতে কোনো রাজার সমস্ত সোনার মোহর।

Flag Counter

About The Author

সম্পাদক

Jebunnahar Joni

জেবুননাহার জনি। Jebunnahar joni. কবি ও গল্পকার। জন্ম : ১১ জানুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ; পৈতৃকনিবাস মাদারীপুর। পিতা : আতাউর রহমান হাওলাদার, মাতা : নুরুননাহার খান। সমাজকল্যাণে বিএ সম্মানসহ এমএ। পেশা : শিক্ষকতা। লেখার বিষয় : কবিতা ও গল্প। প্রকাশিত গ্রন্থ : মেঘলা রাতে চাঁদ (গল্প, ২০০৭), বিরান পথের কাশবন (কবিতা, ২০১৭)। পুরস্কার : গাংচিল সাহিত্য পুরস্কার (২০১১), সমধারা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)।