Sahittya

Literature magazine | Bangla & english worldwide

Father Morino Rigan

Father Morino Rigan

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফাদার রিগন

শেলাবুনিয়ায় শায়িত হলেন ফাদার রিগন

বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিক মুক্তিযোদ্ধা ফাদার মারিনো রিগনের শেষ ইচ্ছানুযায়ী মৃত্যুর এক বছর পর তার মরদেহ এদেশে এনে বাগেরহাটে দাফন করা হয়েছে। রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে মোংলা উপজেলায় তার প্রতিষ্ঠিত শেলাবুনিয়া চার্চের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। গত বছর ২০ অক্টোবর ইতালির ভিচেঞ্চায় মারা যান ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ পাওয়া ফাদার মারিনো।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে তার মরদেহবাহী টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ইতালির মিলানে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ এবং ফাদার মারিনোর ভ্রাতষ্পুত্র মারিনো কাভেস্ট্রো মরদেহের সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছেন। ঢাকা থেকে বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টার মরদেহ সমাধিস্থলে নিয়ে যায় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বীর প্রতীক সাজ্জাদ আলী জহিরের তত্ত্বাবধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে তাকে বহনকারী বিশেষ হেলিকপ্টার মোংলা উপজেলা পরিষদ চত্বরে পৌঁছায়। সেখানে তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিউগল বাজিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পরে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়, মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, খুলনা ধর্ম প্রদেশের বিশপ রমেন বিশ্বাস, ফ্রান্সিস সুদান হালদার, শেলাবুনিয়া ধর্মপল্লির পালক পুরোহিত শেরাফিন সরকার উপস্থিত ছিলেন। খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সাংবাদিকদের বলেন, ফাদার মারিনো রিগন ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। তিনি এদেশে ধর্ম প্রচারে এসেছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি স্বাধীনতাকামী মানুষের পাশে দাঁড়ান। তিনি ধর্ম, শিক্ষা, নারী অধিকার, স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা কল্যাণমুখী কাজে নিজেকে সমর্পণ করেন।
“তার প্রতি মোংলাসহ দেশের মানুষ কৃতজ্ঞ। প্রতি বছর তার জন্মদিনে মোংলায় রিগন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর রিগন মেলা করে তাকে আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখা হবে।” বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ফাদার মরিনো রিগানের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সরকার তাকে সম্মান জানিয়েছে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকলেন।”
বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেন, “আমরা একজন অকৃত্রিম বন্ধুকে হারালাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভিনদেশি একজন মানুষ মৃত্যুর কথা চিন্তা না করে ক্যাম্প খুলে যুদ্ধাহত মানুষের সেবা করে গেছেন। তার ঝণ শোধ হবার হয়।” সরকার তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করে এদেশের শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করেছে, বলেন টুকু। নতুন প্রজন্মের কাছে ফাদার রিগনের এদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের কথা তুলে ধরার আহ্বান জানান জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক ফররুখ হাসান জুয়েল।
মারিনো রিগন ১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ইতালির ভেনিসের কাছে ভিল্লভেরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ১৯৫৩ সালে তিনি বাংলাদেশে আসেন। দেশের নানা জায়গা ঘুরে মোংলার শেলাবুনিয়া গ্রামে থিতু হন এবং সেখানে চার্চ ও স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তার কাজ ধর্ম প্রচারের গণ্ডির মধ্যে থেমে থাকেনি। বাংলাদেশের মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, চিকিৎসা সেবা ও দুঃস্থ নারীদের উন্নয়নে তিনি সব সময় উদ্যোগী ছিলেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল তার অকুণ্ঠ সমর্থন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিতে নিজের চার্চে তিনি গোপনে একটি চিকিৎসা ক্যাম্প খোলেন। সেই ক্যাম্পে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ফিরে গেছেন রণাঙ্গনে। মুক্তিযুদ্ধের হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রমও তাদের একজন। মুক্তিযুদ্ধে ফাদার মারিনো রিগনের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়। ২০১২ সালে তাকে দেওয়া হয় ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’।
তথ্যসূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর, ২১ অক্টোবর ২০১৮

আগের খবর

বাগেরহাটে শায়িত হবেন ফাদার রিগন, মরদেহ আসছে রোববার

‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ পাওয়া ও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জনকারী ইতালির খ্রিস্ট ধর্মযাজক ফাদার মারিনো রিগনের মরদেহ আগামীকাল রোবাবর ইতালি থেকে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে বাগেরহাটে সমাধিস্থ করা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদান রাখাসহ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিবেদিত এই মহান ব্যক্তি ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর ইতালিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলাদেশ সরকার ফাদার মারিনো রিগনের শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তাঁর দেহাবশেষ বাংলাদেশের মাটিতে তাঁরই স্থাপিত বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার শেলাবুনিয়া চার্চের পাশে সমাধিস্থ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে।
ফাদার মারিনো রিগন ১৯২৫ সালের ৫ ফ্রেব্রুয়ারি ইতালির ভেনিসের অদূরে ভিন্নাভেরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্ট ধর্মযাজক হিসেবে তিনি ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে অবশেষে তিনি মংলার শেলাবুনিয়া গ্রামে একটি চার্চ ও একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ওই গ্রামে স্থায়ী আবাসও গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ছিল তার অকুণ্ঠ সমর্থন। যুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য নিজের প্রতিষ্ঠিত চার্চে গোপনে একটি চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন। তাঁর এই ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবা নিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সুস্থ হয়ে পুনরায় রণাঙ্গনে ফিরে গেছেন। তাদের মধ্যে বিখ্যাত হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রমও ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ফাদার মারিনো রিগনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে এবং ২০১২ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করে।
বাংলাদেশে বসবাসের পর থেকে তিনি বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করেন এবং বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার কৌতূহল ও নিবিড় ভালোবাসার জন্ম হয়। তিনি রবীন্দ্রনাথের রচনাবলি, লালনের সংগীত ও দর্শনের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন। তাঁর মাধ্যমে ইতালিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলিসহ প্রায় ৪০টি কাব্যগ্রন্থ, জসীমউদদীনের নকশীকাঁথার মাঠ ও অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ, লালনের গানসহ অসংখ্য সাহিত্যকর্ম।
বাংলাদেশের অকৃত্রিম এই বন্ধুর শেষ ইচ্ছাপূরণ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সকল মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের মহিমাকে সমুজ্জ্বল রাখার আরো একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।
তথ্যসূত্র : রাইজিংবিডি, ২০ অক্টোবর ২০১৮

About The Author

সম্পাদক

Jebunnahar Joni

জেবুননাহার জনি। Jebunnahar joni. কবি ও গল্পকার। জন্ম : ১১ জানুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ; পৈতৃকনিবাস মাদারীপুর। পিতা : আতাউর রহমান হাওলাদার, মাতা : নুরুননাহার খান। সমাজকল্যাণে বিএ সম্মানসহ এমএ। পেশা : শিক্ষকতা। লেখার বিষয় : কবিতা ও গল্প। প্রকাশিত গ্রন্থ : মেঘলা রাতে চাঁদ (গল্প, ২০০৭), বিরান পথের কাশবন (কবিতা, ২০১৭)। পুরস্কার : গাংচিল সাহিত্য পুরস্কার (২০১১), সমধারা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)।