Sahittya

Literature magazine | Bangla & english worldwide

rubaiyat e omar khayyam kazi nazrul islam

rubaiyat e omar khayyam kazi nazrul islam

রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৩১-১৪০)

রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম
(১৩১-১৪০)

১৩১
পানোন্মত্ত বারাঙ্গনায় দেখে সে এক শেখজি কন-
‘দুরাচার আর সুরার করো দাসীপনা সর্বক্ষণ!’
‘আমায় দেখে যা মনে হয়, তাই আমি’-কয় বারনারী,
‘কিন্তু শেখজি, তুমি কি তাই, তোমায় দেখে কয় যা মন?’

১৩২
হাতে নিয়ে পান-পিয়ালা নামাজ পড়ার মাদুরখান-
দেখতে পেলাম ভাঁটি-খানার পথ ধরে শেখ সাহেব যান!
কইনু দেখে, ‘ব্যাপার কী এ, এ-পথে যে শেখ সাহেব!’
কইলেন পির, ‘ফক্কিকার এ-দুনিয়া, করো শরাব পান!’

১৩৩
কালকে রাতে ফিরছি যখন ভাঁটিখানার পাঁড় মাতাল,
পির সাহেবে দেখতে পেলাম, হাতে বোতল-ভরা মাল।
কইনু, ‘হে পির, শরম তোমার নেই কি?’ হেসে কইল পির,
‘খোদার দয়ার ভাণ্ডার সে অফুরন্ত, রে বাচাল!’

১৩৪
হে শহরের মুফতি! তুমি বিপথ-গামী কম তো নও,
পানোন্মত্ত আমার চেয়ে তুমিই বেশি বেহুঁশ হও।
মানব-রক্ত শোষ তুমি, আমি শুষি আঙুর-খুন,
রক্ত-পিপাসু কে বেশি এই দু-জনের, তুমিই কও!

১৩৫
ভন্ত যত ভড়ং করে দেখিয়ে বেড়ায় জায়নামাজ,
চায় না খোদায়-লোকের তারা প্রশংসা চায় ধাপ্পাবাজ!
দিব্যি আছে মুখোশ পরে সাধু ফকির ধার্মিকের,
ভিতরে সব কাফের ওরা, বাইরে মুসলমানের সাজ!

১৩৬
ধূলি-ম্লান এ উপত্যকায় এলি, এসেই হলি গুম,
করল তোরে জরদ্গব এই সে যাওয়া আসার ধুম।
নখগুলো তোর পুরু হয়ে হয়েছে আজ ঘোড়ার খুর,
দাড়ির বোঝা জড়িয়ে গিয়ে হল যেন গাধার দুম।

১৩৭
সুন্দরীদের তনুর তীর্থে এই যে ভ্রমণ, শরাব পান,
ভণ্ডদের ওই বুজরুকি কি হয় কখনও তার সমান?
প্রেমিক এবং পান-পিয়াসি এরাই যদি যায় নরক,
স্বর্গ হবে মোল্লা পাদরি আচার্যদের ‘দাড়ি-স্থান’!

১৩৮
এই মূঢ়দল-স্থূল তাহাদের অজ্ঞানতার ঘোর মায়ায়,
ভাবে-মানবজাতির নেতা তারাই জ্ঞান ও গরিমায়।
ফতোয়া দিয়ে কাফের করে তাদের তারা এক কথায়
শুভ্র-মুক্ত বুদ্ধি যারা, নয় গর্দভ তাদের ন্যায়।

১৩৯
মার্কা-মারা রইস যত-ঈষৎ দুখের বোঝার ভার
বইতে যাঁরা পড়েন ভেঙে, বিস্ময়ের নাই অন্ত আর,
তাঁরাই যখন দীন দরিদ্রে দেখেন দ্বারে পাততে হাত
তাদের তখন চিনতে নারেন মানুষ বলে এই ধরার।

১৪০
দরিদ্রেরে যদি তুমি প্রাপ্য তাহার অংশ দাও,
প্রাণে কারুর না দাও ব্যথা, মন্দ কারুর নাহি চাও
তখন তুমি শাস্ত্র মেনে না-ই চললে তায় বা কি!
আমি তোমায় স্বর্গ দিব, আপাতত শরাব নাও!

অনুবাদ : কাজী নজরুল ইসলাম

সূত্র : নজরুল রচনাবলি

ধারাবাহিকভাবে পড়তে ক্লিক করুন
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১-১০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১১-২০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (২১-৩০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৩১-৪০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৪১-৫০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৫১-৬০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৬১-৭০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৭১-৮০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৮১-৯০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৯১-১০০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১০১-১১০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১১১-১২০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১২১-১৩০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৩১-১৪০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৪১-১৫০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৫১-১৬০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৬১-১৭০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৭১-১৮০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৮১-১৯০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৯১-১৯৭)

About The Author

সম্পাদক

Jebunnahar Joni

জেবুননাহার জনি। Jebunnahar joni. কবি ও গল্পকার। জন্ম : ১১ জানুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ; পৈতৃকনিবাস মাদারীপুর। পিতা : আতাউর রহমান হাওলাদার, মাতা : নুরুননাহার খান। সমাজকল্যাণে বিএ সম্মানসহ এমএ। পেশা : শিক্ষকতা। লেখার বিষয় : কবিতা ও গল্প। প্রকাশিত গ্রন্থ : মেঘলা রাতে চাঁদ (গল্প, ২০০৭), বিরান পথের কাশবন (কবিতা, ২০১৭)। পুরস্কার : গাংচিল সাহিত্য পুরস্কার (২০১১), সমধারা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)।