Sahittya

Literature magazine | Bangla & english worldwide

rubaiyat e omar khayyam kazi nazrul islam

rubaiyat e omar khayyam kazi nazrul islam

রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৩১-৪০)

রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম
(৩১-৪০)

৩১
বলতে পার, অসার-শূন্য ভবের হাটের এই ঘরে
জ্ঞান-বিলাসী সুধীজনের হৃদয় কেন রয় পড়ে?
যেই তাহারা শ্রান্ত হয়ে এই সে ঘরের শান্তি চায়,
‘সময় হল, চল ওরে’, কয় অমনি মরণ হাত ধরে!

৩২
খাজা! তোমার দরবারে মোর একটি শুধু আর্জি এই-
থামাও উপদেশের ঘটা, মুক্তি আমার এই পথেই।
দৃষ্টি-দোষে দেখছ বাঁকা আমার সোজা সরল পথ,
আমায় ছেড়ে ভালো করো ঝাপসা তোমার চক্ষুকেই।

৩৩
কাল কী হবে কেউ জানে না, দেখছ তো হায়, বন্ধু মোর!
নগদ মধু লুঠ করে লও, মোছো মোছো অশ্রু-লোর।
চাঁদনি-তরল শরাব পিয়ো, হায়, সুন্দর এই সে চাঁদ
দীপ জ্বালিয়ে খুঁজবে বৃথাই কাল এ শূন্য ধরার ক্রোড়।

৩৪
প্রেমিকরা সব আমার মতো মাতুক প্রেমের মত্ততায়,
দ্রাক্ষা-রসের দীক্ষা নিয়ে আচার-নীতি দলুক পায়।
থাকি যখন সাদা চোখে, সব কথাতে রুষ্ট হই,
শরাব পিয়ে দিল-দরিয়া উড়িয়ে দি ভয়-ভাবনায়।

৩৫
মানব দেহ-রঙে-রূপে এই অপরূপ ঘরখানি-
স্বর্গের সে শিল্পী কেন করল সৃজন কী জানি,
এই ‘লাল-রুখ’ বল্লি-তনু ফুল-কপোল তন্বীদের
সাজাতে হায় ভঙ্গুর এই মাটির ধরার ফুলদানি!

৩৬
তিন ভাগ জল এক ভাগ থল এই পৃথিবীর এও মায়া,
এই ধরাতে দেখছ যা তার সকল-কিছু সব মায়া,
এই যে তুমি বলছ যা সব, শুনছ কলরব-মায়া।
গোপন প্রকাশ সত্য মিথ্যা এ সব অবাস্তব মায়া।

৩৭
দোষ দেয় আর ভর্ৎসে সবাই আমার পাপের নাম নিয়া,
আমার দেবী-প্রতিমারে পূজি তবু প্রাণ দিয়া।
মরতে যদি হয় গো আমায় শরাব-পানের মজলিশে-
স্বর্গ-নরক সমান, পাশে থাকবে শরাব আর প্রিয়া।

৩৮
মুসাফিরের এক রাত্রির পান্থ-বাস এ পৃথ্বীতল-
রাত্রি-দিবার চিত্র-লেখা চন্দ্রাতপ আঁধার-উজল।
বসল হাজার জামশেদ ওই উৎসবেরই আঙিনায়
লাখ বাহ্রাম এই আসনে বসে হল বেদখল।

৩৯
কারুর প্রাণে দুখ দিয়ো না, করো বরং হাজার পাপ,
পরের মনে শান্তি নাশি বাড়িয়ো না তার মনস্তাপ।
অমর-আশিস লাভের আশা রয় যদি, হে বন্ধু মোর,
আপনি সয়ে ব্যথা, মুছো পরের বুকের ব্যথার ছাপ।

৪০
ছেড়ে দে তুই নীরস বাজে দর্শন আর শাস্ত্রপাঠ,
তার চেয়ে তুই দর্শন কর প্রিয়ার বিনোদ বেণির ঠাট;
ওই সোরাহির হৃদয়-রুধির নিষ্কাশিয়া পাত্রে ঢাল,
কে জানে তোর রুধির পিয়ে কখন মৃত্যু হয় লোপাট।

অনুবাদ : কাজী নজরুল ইসলাম

সূত্র : নজরুল রচনাবলি

ধারাবাহিকভাবে পড়তে ক্লিক করুন
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১-১০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১১-২০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (২১-৩০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৩১-৪০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৪১-৫০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৫১-৬০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৬১-৭০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৭১-৮০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৮১-৯০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৯১-১০০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১০১-১১০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১১১-১২০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১২১-১৩০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৩১-১৪০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৪১-১৫০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৫১-১৬০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৬১-১৭০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৭১-১৮০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৮১-১৯০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৯১-১৯৭)

About The Author

সম্পাদক

Jebunnahar Joni

জেবুননাহার জনি। Jebunnahar joni. কবি ও গল্পকার। জন্ম : ১১ জানুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ; পৈতৃকনিবাস মাদারীপুর। পিতা : আতাউর রহমান হাওলাদার, মাতা : নুরুননাহার খান। সমাজকল্যাণে বিএ সম্মানসহ এমএ। পেশা : শিক্ষকতা। লেখার বিষয় : কবিতা ও গল্প। প্রকাশিত গ্রন্থ : মেঘলা রাতে চাঁদ (গল্প, ২০০৭), বিরান পথের কাশবন (কবিতা, ২০১৭)। পুরস্কার : গাংচিল সাহিত্য পুরস্কার (২০১১), সমধারা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)।