শামীম আজাদের পাঁচটি কবিতা
সন্ধি সময়
কেন জ্বালাচ্ছ,
কোথাও তো আর যাই না এখন!
কিন্তু পায়ের নূপুরে রিং-টোন বাজলেই
চুরি মনে চলে যাই ঐ নাসপাতি তলে
যেখানে এ বিষম বয়স সন্ধির আগে
পানকৌড়ির রোম আর রোদ ছিল
বীজের ব্যাপক আকাঙ্ক্ষা ছিল
স্বাদু বিস্কুটের মতো ছিল তার সেন্ট
আর চা ছিল তরল অভ্যাস।
তখন তপ্ত দিনে
ঘামে আর কামে
মেজাজের মাঠা বানাতাম—
বোদলেয়ারের বালা পরে মধু মাসে
ব্যাঙ্কের বালুসাই, কফি কফি স্মৃতি,
বিট লবণে মাখা ঝালমুরি সংবাদ
সব নিয়ে পা বিছিয়ে বসতাম।
ক্রিসমাসে কবিতার ফুলক্রিম,
ঈদে বন্ধু ভাসা সেমাই,
পুজোয় বাগান বিলাসের নিচে
জলসার প্রাণমাখা টোস্ট এবং হানুকায়
প্রবাসী প্রিয়দের পাঠানো প্রেশারপিল খেতাম।
আসলে নিজস্ব ডি-টক্সই অভ্যাস ছিল।
ফিল্টার বিহীন সুখটানে মটকা মেরে পড়ে থাকতাম অচেনা ঘণ্টার শেষ ফোঁটা পর্যন্ত।
এদিকে তিনি তখন পোর্সেলিন পিরিচে
ফুঁ দিয়ে দিয়ে পান করতেন আমাকে—
আর আমি নাশপাতির লকার খুলে
দৌড়ে এসে উইদাউট সুগারে তাহারে।।
ঐশী
‘জাগ্রত পীর’ বলে কথা আছে
শুনেছি যদিও
বলি তবে, সকলেই মন দিন
শুনুন সবাই
পিরানী আমিও।
না হ’লে স্বপ্নে কেন
পঙক্তি ভাসে পাখির মতন
আকাশ ঘোলাটে হলে
কোমল মেদের মতো
মেঘ ঘোরে কটি ঘিরে, রাত্রি চলে
পূর্ণমনে, প্রেমের তাড়ন!
চুয়াল্লিশ বছর ধরে কেন
আমারই চরণের পরে
শুয়ে আছে বিড়ালীর কানের নরম!
মহারাত হ’লে পরে
কবিতার অহি আসে
যেন কোনো জাগ্রত ওমের কারণ।
সারা গা জ্বর জ্বর করে
তলপেটে নড়ে ওঠে ঠোঁট
আগুন ঝাঁপাইয়া পড়ে
বাতে, পিঠে, গিঁঠে
নৃত্য করে চিরকুটে, মগজের তালে
আর আমি তা আটকে ফেলি
খামচি মেরে নিয়ে নিই
আমার অন্তর্জালে।
এ-দুখানা তরকারি হাতে
সজ্বী ফলে, শাঁস হয়
ঊষা বসে থাকে
দীর্ঘ দুপুর শেষে বালি থেকে
ফিন্কি দেয় দুধের নহর।
কাটে প্রাণ, কাটে সুশ্রী শৈশব
কাটে সূতানলি রাত
হাতের হলুদে উঠে আসে
শব্দগন্ধনূর।
বুঝি,
বিশ্বভাস্যে কবিরা যদি হয় পীর পয়গম্বর
আমিও পিরানী তবে
বহুদিন ধরে বিলাইতেছি কবিতার আতর।।
* পঙক্তি বানানে ঙ-এর নিচে হসন্ত হবে *
নিউ নেশা
সাপ ও শ্বাপদের সাথে সহবাসে আছি
বর্ষাদেহে বীজ নিয়ে মেতেছে তারাই
যতটুকু ভয়ের নিলয়, তার বাইরে
এই দাঁত, এই মুখ আর তব হাওয়ার চিবুক।
এ দেহে এখনো কি মধু আছে
কী তার এমন কারণ
আর আমিও সুবাসী কি-না তাহা তো জানি না
জানি শুধু বাঁ-পাশে
দীর্ঘ বীর্য বসে আছে,
সেই ভোর রাত থেকে
কখন চিবুক থেকে
তুলে নেবে কৃষ্ণের কূহক
স্নেইক স্কিন, সিল্ক ত্বক—এখনো কামুক।
সুরাহা
চন্দ্রকুচো নেমে গেলে ঘুমছায়া সরে গেলে
আমি তোর তাপ পাই, জাগা থাকি
হৃদপিণ্ডও পাহারা দেয় তোমায়… তোমায়।
মনে পড়ে তোর জন্মভোরে
এক অত্যাশ্চর্য হরিৎ দেখেছিলাম
সেই থেকে তুই নিদ্রা করিস প্রতিরাতে
জরায়ুহীন জঠরে আমার
বাহুগুলো যায় ততদূর
যতদূর সিথান তোমার
তোমার ত্বকের আলো তীর হয়ে বিঁধে
গেঁথে নেয় সকল শাসন
আর আমি দাঁড়াই এসে সূর্যেপোড়া সাধের উপর
জানি আমি চলে গেলেও, বাতাস বিশুদ্ধ করে জলরেণু হবে
জারুলের জ্বর যাবে, অযাচিত নাইওরের হবে অবসান
যদি তুমি ছুড়ে ফেলো কীটে কাটা স্লিপার তোমার।
জোছনা-চা
ঘন অমাবস্যার পরেও কি করে যেন এক ফালি পূর্ণিমা পড়েছিল
মনে কোনোক্রমে।
চুমুকে চুমুকে তা পান করছি, কামড়ে ক্রাঞ্চি জোছনার কণা খাচ্ছি
বসে নিজ-ঝুমে।
স্বাদু নরম ও মচমচে চন্দ্রখণ্ড, চন্দ্রচূড়, মিষ্ট চন্দ্রটুক্রা গলে যাচ্ছে
রসনার সিমে।
সতর্ক হয়ে চিবুচ্ছি যেন কিছুতেই সবটা গলা গলিয়ে চলে না যায়
উদরের হীমে।
কারণ, এভাবে এর আগে কখনো জোছনা আর চা এক হয়ে যায়নি।
এভাবে এর আগে কখনো পিরিচ থেকে অমাবস্যা পিছ্লে পড়েনি।
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা...
কয়েকটি কবিতা
প্রয়াণগাথা
প্রদীপ মিত্রের দুটি কবিতা