Sahittya

Literature magazine | Bangla & english worldwide

Gitanjali : Rabindranath Tagore

Gitanjali : Rabindranath Tagore

গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১২৬-১৩০

গীতাঞ্জলি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১২৬-১৩০

১২৬
নিন্দা দুঃখে অপমানে
যত আঘাত খাই
তবু জানি কিছুই সেথা
হারাবার তো নাই।
থাকি যখন ধুলার’পরে
ভাবতে না হয় আসনতরে,
দৈন্যমাঝে অসংকোচে
প্রসাদ তব চাই।

লোকে যখন ভালো বলে,
যখন সুখে থাকি,
জানি মনে তাহার মাঝে
অনেক আছে ফাঁকি।
সেই ফাঁকিরে সাজিয়ে লয়ে
ঘুরে বেড়াই মাথায় বয়ে,
তোমার কাছে যাব এমন
সময় নাহি পাই।

১২৭
রাজার মতো বেশে তুমি সাজাও যে শিশুরে
পরাও যারে মণিরতন-হার—
খেলাধুলা আনন্দ তার সকলি যায় ঘুরে,
বসন-ভুষণ হয় যে বিষম ভার।
ছেঁড়ে পাছে আঘাত লাগি,
পাছে ধুলায় হয় সে দাগি,
আপনাকে তাই সরিয়ে রাখে সবার হতে দূরে,
চলতে গেলে ভাবনা ধরে তার—
রাজার মতো বেশে তুমি সাজাও যে শিশুরে,
পরাও যারে মণিরতন-হার।

কী হবে মা অমনতরো রাজার মতো সাজে,
কী হবে ওই মণিরতন-হারে।
দুয়ার খুলে দাও যদি তো ছুটি পথের মাঝে
রৌদ্রবায়ু-ধুলাকাদার পাড়ে।
যেথায় বিশ্বজনের মেলা
সমস্ত দিন নানান খেলা,
চারি দিকে বিরাট গাথা বাজে হাজার সুরে,
সেথায় সে যে পায় না অধিকার,
রাজার মতো বেশে তুমি সাজাও যে শিশুরে,
পরাও যারে মণিরতন-হার।

১২৮
জড়িয়ে গেছে সরু মোটা
দুটো তারে
জীবনবীণা ঠিক সুরে তাই
বাজে না রে।
এই বেসুরো জটিলতায়
পরান আমার মরে ব্যথায়,
হঠাৎ আমার গান থেমে যায়
বারে বারে।
জীবনবীণা ঠিক সুরে আর
বাজে না রে।

এই বেদনা বইতে আমি
পারি না যে,
তোমার সভার পথে এসে
মরি লাজে।
তোমার যারা গুণী আছে
বসতে নারি তাদের কাছে,
দাঁড়িয়ে থাকি সবার পাছে
বাহির-দ্বারে।
জীবনবীণা ঠিক সুরে আর
বাজে না রে।

১২৯
গাবার মতো হয় নি কোনো গান,
দেবার মতো হয় নি কিছু দান।
মনে যে হয় সবই রইল বাকি
তোমায় শুধু দিয়ে এলেম ফাঁকি,
কবে হবে জীবন পূর্ণ করে
এই জীবনের পূজা অবসান।

আর-সকলের সেবা করি যত
প্রাণপণে দিই অর্ঘ্য ভরি ভরি।
সত্য মিথ্যা সাজিয়ে দিই যে কত
দীন বলিয়া পাছে ধরা পড়ি।
তোমার কাছে গোপন কিছু নাই,
তোমার পূজায় সাহস এত তাই,
যা আছে তাই পায়ের কাছে আনি
অনাবৃত দরিদ্র এই প্রাণ।

১৩০
আমার মাঝে তোমার লীলা হবে,
তাই তো আমি এসেছি এই ভবে।
এই ঘরে সব খুলে যাবে দ্বার,
ঘুচে যাবে সকল অহংকার,
আনন্দময় তোমার এ সংসারে
আমার কিছু আর বাকি না রবে।

মরে গিয়ে বাঁচব আমি, তবে
আমার মাঝে তোমার লীলা হবে।
সব বাসনা যাবে আমার থেমে
মিলে গিয়ে তোমারি এক প্রেমে,
দুঃখসুখের বিচিত্র জীবনে
তুমি ছাড়া আর কিছু না রবে।

সূত্র : রবীন্দ্র রচনাবলি, কাব্যগ্রন্থ : গীতাঞ্জলি

ধারাবাহিকভাবে পড়তে ক্লিক করুন
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১-৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬-১০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১-১৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৬-২০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ২১-২৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ২৬-৩০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৩১-৩৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৩৬-৪০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৪১-৪৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৪৬-৫০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৫১-৫৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৫৬-৬০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬১-৬৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬৬-৭০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৭১-৭৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৭৬-৮০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৮১-৮৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৮৬-৯০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৯১-৯৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৯৬-১০০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১০১-১০৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১০৬-১১০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১১-১১৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১৬-১২০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১২১-১২৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১২৬-১৩০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৩১-১৩৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৩৬-১৪০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৪১-১৪৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৪৬-১৫০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৫১-১৫৭

Flag Counter

About The Author

সম্পাদক

Jebunnahar Joni

জেবুননাহার জনি। Jebunnahar joni. কবি ও গল্পকার। জন্ম : ১১ জানুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ; পৈতৃকনিবাস মাদারীপুর। পিতা : আতাউর রহমান হাওলাদার, মাতা : নুরুননাহার খান। সমাজকল্যাণে বিএ সম্মানসহ এমএ। পেশা : শিক্ষকতা। লেখার বিষয় : কবিতা ও গল্প। প্রকাশিত গ্রন্থ : মেঘলা রাতে চাঁদ (গল্প, ২০০৭), বিরান পথের কাশবন (কবিতা, ২০১৭)। পুরস্কার : গাংচিল সাহিত্য পুরস্কার (২০১১), সমধারা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)।