Sahittya

Literature magazine | Bangla & english worldwide

Gitanjali : Rabindranath Tagore

Gitanjali : Rabindranath Tagore

গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৫১-১৫৭

গীতাঞ্জলি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৫১-১৫৭

১৫১
প্রেমের হাতে ধরা দেব
তাই রয়েছি বসে;
অনেক দেরি হয়ে গেল,
দোষী অনেক দোষে।
বিধিবিধান-বাঁধনডোরে
ধরতে আসে, যাই সে সরে,
তার লাগি যা শাস্তি নেবার
নেব মনের তোষে।
প্রেমের হাতে ধরা দেব
তাই রয়েছি বসে।

লোকে আমায় নিন্দা করে,
নিন্দা সে নয় মিছে,
সকল নিন্দা মাথায় ধরে
রব সবার নীচে।
শেষ হয়ে যে গেল বেলা,
ভাঙল বেচা-কেনার মেলা,
ডাকতে যারা এসেছিল
ফিরল তারা রোষে।
প্রেমের হাতে ধরা দেব
তাই রয়েছি বসে।

১৫২
সংসারেতে আর-যাহারা
আমায় ভালোবাসে
তারা আমায় ধরে রাখে
বেঁধে কঠিন পাশে।
তোমার প্রেম যে সবার বাড়া
তাই তোমারি নূতন ধারা,
বাঁধ নাকো, লুকিয়ে থাক ‘
ছেড়েই রাখ দাসে।

আর-সকলে, ভুলি পাছে
তাই রাখে না একা।
দিনের পরে কাটে যে দিন,
তোমারি নেই দেখা।
তোমায় ডাকি নাই বা ডাকি,
যা খুশি তাই নিয়ে থাকি;
তোমার খুশি চেয়ে আছে
আমার খুশির আশে।

১৫৩
প্রেমের দূতকে পাঠাবে নাথ কবে।
সকল দ্বন্দ্ব ঘুচবে আমার তবে।

আর-যাহারা আসে আমার ঘরে
ভয় দেখায়ে তারা শাসন করে,
দুরন্ত মন দুয়ার দিয়ে থাকে,
হার মানে না, ফিরায়ে দেয় সবে।

সে এলে সব আগল যাবে ছুটে,
সে এলে সব বাঁধন যাবে টুটে,
ঘরে তখন রাখবে কে আর ধরে
তার ডাকে যে সাড়া দিতেই হবে।

আসে যখন, একলা আসে চলে,
গলায় তাহার ফুলের মালা দোলে,
সেই মালাতে বাঁধবে যখন টেনে
হৃদয় আমার নীরব হয়ে রবে।

১৫৪
গান গাওয়ালে আমায় তুমি
কতই ছলে যে,
কত সুখের খেলায়, কত
নয়নজলে হে।
ধরা দিয়ে দাও না ধরা,
এস কাছে, পালাও ত্বরা,
পরান কর ব্যথায় ভরা
পলে পলে হে।
গান গাওয়ালে এমনি করে
কতই ছলে যে।
কত তীব্র তারে, তোমার
বীণা সাজাও যে,
শত ছিদ্র করে জীবন
বাঁশি বাজাও হে।
তব সুরের লীলাতে মোর
জনম যদি হয়েছে ভোর,
চুপ করিয়ে রাখো এবার
চরণতলে হে,
গান গাওয়ালে চিরজীবন
কতই ছলে যে।

১৫৫
মনে করি এইখানে শেষ—
কোথা বা হয় শেষ
আবার তোমার সভা থেকে
আসে যে আদেশ ।
নূতন গানে নূতন রাগে
নূতন করে হৃদয় জাগে,
সুরের পথে কোথা যে যাই
না পাই সে উদ্দেশ।

সন্ধ্যাবেলার সোনার আভায়
মিলিয়ে নিয়ে তান
পূরবীতে শেষ করেছি
যখন আমার গান—
নিশীথ রাতের গভীর সুরে
আবার জীবন উঠে পুরে,
তখন আমার নয়নে আর
রয় না নিদ্রালেশ।

১৫৬
শেষের মধ্যে অশেষ আছে,
এই কথাটি, মনে
আজকে আমার গানের শেষে
জাগছে ক্ষণে ক্ষণে।
সুর গিয়েছে থেমে, তবু
থামতে যেন চায় না কভু,
নীরবতায় বাজছে বীণা
বিনা প্রয়োজনে।
তারে যখন আঘাত লাগে,
বাজে যখন সুরে—
সবার চেয়ে বড়ো যে গান
সে রয় বহুদূরে।
সকল আলাপ গেলে থেমে
শান্ত বীণায় আসে নেমে,
সন্ধ্যা যেমন দিনের শেষে
বাজে গভীর স্বনে।

১৫৭
দিবস যদি সাঙ্গ হল, না যদি গাহে পাখি,
ক্লান্ত বায়ু না যদি আর চলে—
এবার তবে গভীর করে ফেলো গো মোরে ঢাকি
অতি নিবিড় ঘন তিমিরতলে
স্বপন দিয়ে গোপনে ধীরে ধীরে
যেমন করে ঢেকেছ ধরণীরে,
যেমন করে ঢেকেছ তুমি মুদিয়া-পড়া আঁখি,
ঢেকেছ তুমি রাতের শতদলে।

পাথেয় যার ফুরায়ে আসে পথের মাঝখানে,
ক্ষতির রেখা উঠেছে যার ফুটে,
বসনভূষা মলিন হল ধুলায় অপমানে
শকতি যার পড়িতে চায় টুটে—
ঢাকিয়া দিক তাহার ক্ষতব্যথা
করুণাঘন গভীর গোপনতা,
ঘুচায়ে লাজ ফুটাও তারে নবীন উষাপানে
জুড়ায়ে তারে আঁধার সুধাজলে।

সূত্র : রবীন্দ্র রচনাবলি, কাব্যগ্রন্থ : গীতাঞ্জলি

—শেষ—

ধারাবাহিকভাবে পড়তে ক্লিক করুন
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১-৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬-১০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১-১৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৬-২০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ২১-২৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ২৬-৩০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৩১-৩৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৩৬-৪০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৪১-৪৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৪৬-৫০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৫১-৫৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৫৬-৬০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬১-৬৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬৬-৭০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৭১-৭৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৭৬-৮০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৮১-৮৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৮৬-৯০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৯১-৯৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৯৬-১০০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১০১-১০৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১০৬-১১০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১১-১১৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১৬-১২০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১২১-১২৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১২৬-১৩০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৩১-১৩৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৩৬-১৪০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৪১-১৪৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৪৬-১৫০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৫১-১৫৭

Flag Counter

About The Author

সম্পাদক

Jebunnahar Joni

জেবুননাহার জনি। Jebunnahar joni. কবি ও গল্পকার। জন্ম : ১১ জানুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ; পৈতৃকনিবাস মাদারীপুর। পিতা : আতাউর রহমান হাওলাদার, মাতা : নুরুননাহার খান। সমাজকল্যাণে বিএ সম্মানসহ এমএ। পেশা : শিক্ষকতা। লেখার বিষয় : কবিতা ও গল্প। প্রকাশিত গ্রন্থ : মেঘলা রাতে চাঁদ (গল্প, ২০০৭), বিরান পথের কাশবন (কবিতা, ২০১৭)। পুরস্কার : গাংচিল সাহিত্য পুরস্কার (২০১১), সমধারা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)।