গীতাঞ্জলি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২৬-৩০
২৬
আর নাই রে বেলা, নামল ছায়া
ধরণীতে,
এখন চল্ রে ঘাটে কলসখানি
ভরে নিতে।
জলধারার কলস্বরে
সন্ধ্যাগগন আকুল করে,
ওরে ডাকে আমায় পথের ‘পরে
সেই ধ্বনিতে।
চল্ রে ঘাটে কলসখানি
ভরে নিতে।
এখন বিজন পথে করে না কেউ
আসা-যাওয়া,
ওরে প্রেম-নদীতে উঠেছে ঢেউ,
উতল হাওয়া।
জানি নে আর ফিরব কিনা,
কার সাথে আজ হবে চিনা,
ঘাটে সেই অজানা বাজায় বীণা
তরণীতে।
চল্ রে ঘাটে কলসখানি
ভরে নিতে।
২৭
আজ বারি ঝরে ঝর ঝর
ভরা বাদরে।
আকাশ-ভাঙা আকুল ধারা
কোথাও না ধরে।
শালের বনে থেকে থেকে
ঝড় দোলা দেয় হেঁকে হেঁকে,
জল ছুটে যায় এঁকেবেঁকে
মাঠের’পরে।
আজ মেঘের জটা উড়িয়ে দিয়ে
নৃত্য কে করে।
ওরে বৃষ্টিতে মোর ছুটেছে মন,
লুটেছে ওই ঝড়ে,
বুক ছাপিয়ে তরঙ্গ মোর
কাহার পায়ে পড়ে।
অন্তরে আজ কী কলরোল,
দ্বারে দ্বারে ভাঙল আগল,
হৃদয়-মাঝে জাগল পাগল
আজি ভাদরে।
আজ এমন করে কে মেতেছে
বাহিরে ঘরে।
২৮
প্রভু তোমা লাগি আঁখি জাগে;
দেখা নাই পাই,
পথ চাই,
সেও মনে ভালো লাগে।
ধুলাতে বসিয়া দ্বারে
ভিখারি হৃদয় হা রে
তোমারি করুণা মাগে।
কৃপা নাই পাই,
শুধু চাই,
সেও মনে ভালো লাগে।
আজি এ জগত-মাঝে
কত সুখে কত কাজে
চলে গেল সবে আগে।
সাথি নাই পাই,
তোমায় চাই,
সেও মনে ভালো লাগে।
চারি দিকে সুধাভরা
ব্যাকুল শ্যামল ধরা
কাঁদায় রে অনুরাগে।
দেখা নাই নাই,
ব্যথা পাই,
সেও মনে ভালো লাগে।
২৯
ধনে জনে আছি জড়ায়ে হায়,
তবু জান, মন তোমারে চায়।
অন্তরে আছ হে অন্তর্যামী,
আমা চেয়ে আমায় জানিছ স্বামী—
সব সুখে দুখে ভুলে থাকায়
জান, মম মন তোমারে চায়।
ছাড়িতে পারি নি অহংকারে,
ঘুরে মরি শিরে বহিয়া তারে,
ছাড়িতে পারিলে বাঁচি যে হায়—
তুমি জান, মন তোমারে চায়।
যা আছে আমার সকলি কবে
নিজ হাতে তুমি তুলিয়া লবে।
সব ছেড়ে সব পাব তোমায়,
মনে মনে মন তোমারে চায়।
৩০
এই তো তোমার প্রেম, ওগো
হৃদয়হরণ।
এই-যে পাতায় আলো নাচে
সোনার বরন।
এই-যে মধুর আলসভরে
মেঘ ভেসে যায় আকাশ- ‘ পরে,
এই-যে বাতাস দেহে করে
অমৃত ক্ষরণ।
এই তো তোমার প্রেম, ওগো
হৃদয়হরণ।
প্রভাত-আলোর ধারায় আমার
নয়ন ভেসেছে।
এই তোমারি প্রেমের বাণী
প্রাণে এসেছে।
তোমারি মুখ ওই নুয়েছে,
মুখে আমার চোখ থুয়েছে,
আমার হৃদয় আজ ছুঁয়েছে
তোমারি চরণ।
সূত্র : রবীন্দ্র রচনাবলি, কাব্যগ্রন্থ : গীতাঞ্জলি
ধারাবাহিকভাবে পড়তে ক্লিক করুন
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১-৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬-১০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১-১৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৬-২০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ২১-২৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ২৬-৩০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৩১-৩৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৩৬-৪০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৪১-৪৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৪৬-৫০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৫১-৫৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৫৬-৬০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬১-৬৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৬৬-৭০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৭১-৭৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৭৬-৮০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৮১-৮৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৮৬-৯০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৯১-৯৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ৯৬-১০০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১০১-১০৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১০৬-১১০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১১-১১৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১১৬-১২০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১২১-১২৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১২৬-১৩০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৩১-১৩৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৩৬-১৪০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৪১-১৪৫
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৪৬-১৫০
গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ১৫১-১৫৭
৭ thoughts on “গীতাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : ২৬-৩০”