রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম
(১১১-১২০)
১১১
হঠাৎ সেদিন দেখলাম, এক কর্মরত কুম্ভকার,
করছে চূর্ণ মাটির ঢেলা, ঘট তৈরির মাল দেদার।
দিব্য দৃষ্টি দিয়ে এসব যেই দেখলাম, কইল মন,
নূতন ঘট এ করছে সৃজন মাটিতে মোর বাপ দাদার।
১১২
একী আজব করছ সৃষ্টি, কুম্ভকার হে, হাত থামাও!
চূর্ণ নরের মাটি নিয়ে করছ কী তা দেখতে পাও?
কায়খসরুর হৃদয় এবং ফরীদুনের অঙ্গুলি
বে-পরোয়া হয়ে তোমার নিঠুর চাকায় মিশিয়ে যাও!
১১৩
চূর্ণ করে তোমায় আমায় গড়বে কুঁজো কুম্ভকার,
ওগো প্রিয়া! পার হবার সে আগেই মৃত্যু-খিড়কি-দ্বার-
পাত্রে ব্যথার শান্তি ঢালো-এই সোরাহির লাল সুরা,
এক পেয়ালা তুমি পিয়ো, আমায় দিয়ো পেয়ালা আর।
১১৪
এই যে রঙিন পেয়ালাগুলি নিজ হাতে যে গড়ল সে
ফেলবে ভেঙে খেয়াল-খুশির লীলায় এদের বিন-দোষে?
এতগুলি সুষ্ঠু শোভন চটুল আঁখি চন্দ্রমুখ
প্রীতির ভরে সৃষ্টি করে করবে ধ্বংস ক্রোধবশে?
১১৫
পিয়ালাগুলি তুলে ধরো চৈত্রী লালা ফুলের প্রায়
ফুরসুত তোর থাকলে, নিয়ে বস লালা-রুখদিল প্রিয়ায়।
মউজ করে শরাব পিয়ো, গ্রহের ফেরে হয়তো ভাই
উলটে দেবে পেয়ালা সুখের হঠাৎ-আসা ঝঞ্ঝাবায়।
১১৬
মসজিদ আর নামাজ রোজার থামাও থামাও গুণ গাওয়া,
যাও, গিয়ে খুব শরাব পিয়ো, যেমন করেই যাক পাওয়া!
খৈয়াম, তুই পান করে যা, তোর ধূলিতে কোন একদিন
তৈরি হবে পিয়ালা, কুঁজো, গাগরি, গেলাস মদ-খাওয়া।
১১৭
মৃত্যু যেদিন নিঠুর পায়ে দলবে আমার এই পরান,
আয়ুর পালক ছিন্ন করি করবে হৃদয়-রক্ত পান,
আমায় মাটির ছাঁচে ঢেলে পেয়ালা করে ঢালবে মদ,
হয়তো গন্ধে সেই শরাবের আবার হব আয়ুষ্মান!
১১৮
রে নির্বোধ! এ ছাঁচে-ঢালা মাটির ধরা শূন্য সব,
রং-বেরং-এর খিলান-করা এই যে আকাশ-অবাস্তব।
এই যে মোদের আসা-যাওয়া জীবন-মৃত্যু-পথ দিয়ে,
একটি নিশাস ইহার আয়ু, আকাশ-কুসুমের এ টব।
১১৯
তিরস্কার আর করবে কত জ্ঞান-দাম্ভিক অর্বাচীন?
লম্পট নই, পান যদিও করি শরাব রাত্রিদিন!
তোমার কাছে তসবি দাড়ি, তাপস সাজার নানান মাল,
আমার পুঁজি দিল্-প্রিয়া আর লাল পেয়ালি মদ-রঙিন!
১২০
মসজিদের ওই পথে ছুটি প্রায়ই আমি ব্যাকুল প্রাণ,
নামাজ পড়তে নয় তা বলে, খোদার কসম! সত্যি মান
নামাজ পড়ার ভান করে যাই করতে চুরি জায়নামাজ ,
যেই ছিঁড়ে যায় সেখানা, যাই করতে চুরি আরেকখান।
অনুবাদ : কাজী নজরুল ইসলাম
সূত্র : নজরুল রচনাবলি
ধারাবাহিকভাবে পড়তে ক্লিক করুন
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১-১০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১১-২০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (২১-৩০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৩১-৪০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৪১-৫০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৫১-৬০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৬১-৭০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৭১-৮০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৮১-৯০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (৯১-১০০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১০১-১১০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১১১-১২০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১২১-১৩০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৩১-১৪০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৪১-১৫০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৫১-১৬০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৬১-১৭০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৭১-১৮০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৮১-১৯০)
রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১৯১-১৯৭)
১ thought on “রুবাইয়াত্-ই-ওমর খৈয়াম (১১১-১২০)”