Sahittya

Literature magazine | Bangla & english worldwide

heyali natto - Rabindranath Tagore

heyali natto - Rabindranath Tagore

হেঁয়ালিনাট্য : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বৈকুণ্ঠ, তস্য পুত্র খগেশ এবং অন্যান্য পাঁচজন

বৈকুণ্ঠ। আমার ছেলের কী বুদ্ধি! প্রায় আমারই মতো। যখন তর্ক করে মুখের কাছে দাঁড়ানো যায় না। বাবা খগেশ, অনেক লোক উপস্থিত আছেন, এইখেনে একবার তর্ক করতে আরম্ভ করো দেখি।

অন্য পাঁচজন। (মনে মনে) তা হলে পালাতে হয় বুঝি!

খগেশ। আচ্ছা, রাজি আছি। এখন কাকে ওড়াতে হবে কাকে রাখতে হবে বলে দাও। অন্য পাঁচজন। (মনে মনে) আপনাকে আর বাবাকে রেখে বাকি সকলকে উড়িয়ে দাও। বৈকুণ্ঠ। বাবা, যেটা হাতের কাছে পাও সেইটেই ওড়াও! ইহকাল ওড়াও, পরকাল ওড়াও। খগেশ। তা হলে রোসো বাবা, আগে dinner টা খেয়ে নেওয়া যাক, তার পরে খেয়ে-দেয়ে বেশ ঠাণ্ডা হয়ে রয়ে-বসে চুরট টানতে টানতে চুরটের ধোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আরামে উড়িয়ে দেব, যারা যারা উপস্থিত থাকবে দেখে আশ্চর্য হয়ে যাবে।

বৈকুণ্ঠ। That’s right খগেশ! আপনারা সকলেই দেখছেন আমার খগেশ কেমন sensible। ওর মাথায় কোনোরকম nonsense নেই। যেটা real এবং immediate want তার প্রতি ওর প্রথম নজর–তার পরে সেটা satisfied হলে পরে কাগজের চুরটের মতো জগতের ডগায় তর্কের দেশলাই ধরিয়ে ওটাকে quietly বসে বসে ধোঁয়া করেই ওড়াও বা ছাই করেই ফেলো তাতে আরাম বৈ কারো কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি নেই।

খগেশ। হাঃ হাঃ হাঃ, বাবা has put the matter very well indeed। আমি দেখেছি বাবা যেমন clearly and with great precision একটা proposition lay down করতে পারেন, এমন there are very few men who-

বৈকুণ্ঠ। সে আর তোমার বলবার দরকার নেই। I know that। আর কিছু না, এর secret হচ্ছে clear head এবং proper training। আমাদের দেশের লোকের ঐ দুটো জিনিসেরই বিশেষ অভাব and in consequence, none of them has the least idea how to think out a subject।

খগেশ। And I must confess তুমি আমার বাবা হওয়াতে আমার ঐ এক মস্ত advantage হয়েছে, certainly I possess a clear head, আর তার জন্যে আমি তোমার কাছে really grateful আছি বাবা!

অন্য পাঁচজন। বাপ-বেটার কী বিনয়!

খগেশ। Nonsense! বিনয়!–আচ্ছা, এসো, এই বিষয়ে একটা settle করা যাক। I don’t believe in বিনয়। It must be either hypocrisy or ignorance। যারা really clever they know they are clever and why should they not make it known to other people! Now, come, বিনয় কাকে বলে—let us have a definition of it।

অন্য পাঁচজন। (মাথা চাপড়াইয়া) clear head নেই। খগেশবাবু, তোমার বাবার মতো বাবা আমাদের ছিল না। বিনয়ের definition আমাদের ঠাহর হচ্ছে না!

বৈকুণ্ঠ। ওহে ও যজ্ঞেশ্বর, শুনে যাও, শুনে যাও। আমার ছেলে খগেশ এ দিকে তর্ক করতে আরম্ভ করেছে—It’s a treat to hear him argue।–(খগেশের পিঠ চাপড়াইয়া) Go on খগেশ!

যজ্ঞেশ্বর। আজ আমাদের ওখেনে খেতে গেলে না যে!

খগেশ। (হঠাৎ অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া) Now, come–কেন খেতে যাব!

যজ্ঞেশ্বর। কথা ছিল যে।

খগেশ। কী কথা ছিল ভালো করে analyse করে দেখা যাক। তুমি আমাকে বললে, ‘খগি, কাল আমাদের বাড়ি খেতে যাবে কি?’ আমি বললুম, ‘হাঁ।’ ভেবে দেখো it was no promise। তুমি simply একটি fact জানতে চেয়েছিলে, এবং তখন যেটা likely answer বোধ হল সেইটে তোমাকে বললুম। মনে করো if you had asked me ‘খগি, কাল তুমি কি কালো মোজা পরবে’ and if I happened to have answered ‘হাঁ’ এবং আজ যদি আমি কালো মোজা না পরতুম, what then! কিন্তু তুমি যদি বলতে-

যজ্ঞেশ্বর। বুঝেছি খগেশ, আর কাজ নেই।

খগেশ। কাজ আছে। তুমি নাকি হঠাৎ এসে একটা wrong statement করে সকলের মনে একটা vague impression create করে দিয়েছ যে আমি আমার promise রাখি নে, তারই absurdity আমি প্রমাণ করে দিতে চাই! Now, to the point–তুমি আমাকে next question জিজ্ঞাসা করলে, ‘কখন আসবে?’ আমি বললুম, ‘তা বলতে পারি নে, আমি ঘড়ি ধরে কাজ করি নে।’ তুমি একটা further question জিজ্ঞাসা করলে, আমি তার একটা indefinite উত্তর দিলুম—and the last question was, ‘তুমি কী খাবে? মাংস না ডাল ভাত?’ আমি বললুম, ‘যা পাব তাই খাব।’ There it ended। এর থেকে কী কী প্রমাণ হচ্ছে দেখা যাক-

যজ্ঞেশ্বর। রক্ষে করো বাপু, আমার বাড়িতে যে তোমার পা পড়ে নি সে আমার পরম সৌভাগ্য বলতে হবে।

অন্য পাঁচজন। পা পড়ে নি বলছেন কি, মাথা পড়ে নি বলুন–আপনার নেমন্তন্নের মধ্যে যদি ওর clear headটা হঠাৎ গিয়ে পড়ত সে তো কামানের গোলা পড়ত, আপনার বন্ধুবান্ধবেরা সশঙ্কিত হয়ে উঠত। clear head অতি ভয়ানক জিনিস! বিশেষ সভাস্থলে।

যজ্ঞেশ্বর। তা ঠিক বলেছেন।

বৈকুণ্ঠ। (পিঠ থাবড়াইয়া) তুমি বলে যাও-না খগেশ! থামলে কেন? বেশ বলছিলে।

খগেশ। যার এক-পাতা logic পড়া আছে সে কখনো deny করতে পারবে না যে–

যজ্ঞেশ্বর। তোমার যা বলবার বলো, আমরা চললুম।

বৈকুণ্ঠ। কেন কেন!

যজ্ঞেশ্বর। ভদ্রসমাজে–নিমন্ত্রণে বা বন্ধুবান্ধবের সভায়–ভদ্রলোকেরা গল্পসল্প করে, আমোদ করে, আলোচনা করে, কিন্তু পারতপক্ষে তর্ক করে না। যারা কথায় কথায় তর্ক উঁচিয়ে খেঁকিয়ে আসে, তাদের একরকম সংকীর্ণ তীক্ষ্ম বুদ্ধি থাকতে পারে বটে, কিন্তু তারা ভদ্র নয়।

বৈকুণ্ঠ। কিন্তু idea-র precision–

খগেশ। perception-এর clearness–

বৈকুণ্ঠ। expression-এর luminous lucidity–

খগেশ। the sense of utter futility of all fog and fallacy–

যজ্ঞেশ্বর। ও-সবই থাকতে পারে, কিন্তু তাই বলে তার্কিকতা-নামক তীক্ষ্ণ ও নর্তনশীল জিহ্বাগ্রভাগ সগর্বে সকলকে প্রদর্শন করবার জন্যে সর্বদা বের করে উঁচিয়ে রেখে দিতে হবে–ভদ্রসমাজে তার কোনো আবশ্যক নেই।

খগেশ। ‘ভদ্রসমাজে’র definition কী?

বৈকুণ্ঠ। and what is ‘তর্ক’।

খগেশ। জিহ্বাই বা কী? where is the analogy?

বৈকুণ্ঠ। এবং ‘আবশ্যক’ কাকে বলে?

খগেশ। তোমার idea of ‘সর্বদা’ই বা কিরকম।

সকলে। আর এক দণ্ড এখানে থাকা নয়।

খগেশ। দেখেছ বাবা? একটা proposition-এর মধ্যে string of inaccuracies!

বৈকুণ্ঠ। want of precision and proper training!

-o-

About The Author

সম্পাদক

Jebunnahar Joni

জেবুননাহার জনি। Jebunnahar joni. কবি ও গল্পকার। জন্ম : ১১ জানুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ; পৈতৃকনিবাস মাদারীপুর। পিতা : আতাউর রহমান হাওলাদার, মাতা : নুরুননাহার খান। সমাজকল্যাণে বিএ সম্মানসহ এমএ। পেশা : শিক্ষকতা। লেখার বিষয় : কবিতা ও গল্প। প্রকাশিত গ্রন্থ : মেঘলা রাতে চাঁদ (গল্প, ২০০৭), বিরান পথের কাশবন (কবিতা, ২০১৭)। পুরস্কার : গাংচিল সাহিত্য পুরস্কার (২০১১), সমধারা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)।