সেলিম রেজার পাঁচটি কবিতা
ছায়াশরীর
বয়সটা কী দেখেছো!
চামড়ার ভাঁজ চোখে পড়লো বুঝি!
রক্তবর্ণ ঠোঁট, বুকের জমিনে উত্তাল ঢেউ
ফিকে সব সময়ের বিবর্তে
কোথাও খোঁজে পাবে না চেনামুখ
রাশিরাশি স্বপ্ন
সব দগ্ধ, বিমর্ষ, রুগ্ন
দেখেছো আলোর কুপিটা
ক্যামন নিভু নিভু
অন্ধকার ঘরের ছায়াশরীর;
ছুঁয়ে দেখবে! দেখো—
অনুভূতিগুলো মরা গাঙের জল
বুকের উত্তাপ হারিয়েছে সেই কবে
আধমরা জীবন শুধুই জ্বলছে অনলে
আদিম গুহা
হাহাকারে ঝিমিয়ে থাকা মানবতা দেয় দৌঁড়
মৃত্যু বিলাপে যেন ভাঙছে নৈঃশব্দ্যের আড্ডা
মানুষের অভিশাপে নিষ্ফল উপাসনা
পেরোতে পারে না স্রষ্টার চৌকাঠ
আর্তচিৎকারে স্বয়ং ঈশ্বর;
মাথা নুয়ে ধ্যানমগ্ন কালের অহম
ভায়োলিনে বাজছে করুণ সুর
সময়ে শূন্য দ্রাঘিমায় শোনা যায়
মন্দিরের কীর্তন
সময়ে ভুলের খণ্ডচিত্রে দেখা যায়
হাঙরের জংশন
আর্তনাদ পতনের আয়ু মাপে
ডাকাতসম্প্রদায় এক খোয়াড়ে
ইদানীং অলীক স্বপ্নে মানুষ
নিচ্ছে ঠাঁই আদিম গুহায়
ডাকহরকরা
ডাকনামে চিঠির শব্দগুলো
নিরিবিলি হাঁটে, পায়ে ঘাসের ঘুঙুর
পাখিদের ঝাঁকে কুয়াশা সকাল
অনেকটা দূরে নিবিড় নদী
অরণ্যের একপ্রান্ত-জলজ সন্ধ্যা;
ঠিকানাবিহীন খাম
কাউকে পায়নি খুঁজে
ডাকহরকরা ফিরে গেল যে পথে
সে পথে খোলামেলা অন্ধকার
হয়তো-বা আসবে ফিরে বৃষ্টিদিনে
চিঠি বিলির বাসনায় দীর্ঘ আলাপে
কালের অহম
রাগের করাতে কেটে ফেলা দৃষ্টি
টুকরো রঙিন কাঁচ, রক্তচোখ-পোড়াদেহ
আয়নায় টোকা দেয় কালের অহম;
রাতারাতি সমুদ্রবুকে সাঁতার শিখে
ঢেউ ঢেউয়ের সাথে সখ্যতা গড়ে
কিশোরী বেলা আলতার স্বপ্নে
নৈঃশব্দ্যে পুষে মেঘজারুল বেদনা
নিঃসঙ্গ বাতাসে উড়ে হলুদফুল
ছিন্ন পালকে পলাতক পাখি
শিকারির তীরন্দাজে আহত ঘাসফড়িং
হেকমতি কৌটা
ইদানীং খেলার মানুষ পুরোটা ময়দানে
দৌড়াচ্ছে দিগ্বিদিক চোখ-কান বন্ধ করে
দু-মুখো মানুষ ঢের দেখছি
আশাপাশে দিব্যি ছুটছে
প্রশংসার সনদ কুঁড়াতে হামলে পড়ছে;
তাতে আমার কিছু যায় আসে না
আমি তো সন্ন্যাসী
আমার আঙিনায় চি কুতঁ কুতঁ খেলার দিন শেষ
এবার যেতে পারো ভিনদেশি সীমানায় শেষমেশ
যদিও-বা কথার ছলে বলে ফেলি কিছু
তাতেই ক্রুদ্ধ ডান-বাম, খেলে রাজনীতি
বিন্দু থেকে বৃত্ত কিংবা সমান্তরাল
ষড়যন্ত্রের জাল বুনে জোটবদ্ধ উগ্রবাদী
বিষ ঢেলে দেয় হেকমতি কৌটায়
বলো—কোথায় গিয়ে বলি!
প্রাপ্তির ঝোলা কোথায় নিয়ে রাখি!
ইদানীং খেলার মানুষ পুরোটা শহরে
শোরগোল, দিচ্ছে হাততালি…
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা...
কয়েকটি কবিতা
প্রয়াণগাথা
প্রদীপ মিত্রের দুটি কবিতা