কয়েকটি কবিতা
সুনীল শর্মাচার্য
কয়েকটি কবিতা
১
নীরব সম্মতি থাকে কারও ওপরে
নিভৃত মিলন শেষে রাধিকার দাহ
যায় না ধুলে দেহ যমুনার জলে
অতৃপ্ত উল্কাপাতে হৃদয় গরল…
ছেঁড়া তার বেজে ওঠে বেহাগের সুরে
বিস্মৃতি আঁকা থাকে মনের গোপনে
.
২
একটু শুশ্রূষা দিও বন্ধু। একটু শুশ্রূষা দিও
আজন্ম ভালোবাসার এইটুকুই দাবি।
পরিযায়ী দিন যায় আশার মৃত্যু দেখে
.
কেন চাও উদ্দামতা, প্রেম গাঢ় সমারোহ!
.
৩
গাছেরা প্রতিদিন বলে মৃত্যুর কথা
পাতা ঝরিয়ে, পাতা ঝরিয়ে তার ইশারা
তবু আশা চায় যত স্বপ্ন বাচালতা
জন্মের ঘ্রাণে…
.
৪
কত রক্ত, যুদ্ধের কথা ধ্বনিত ঐ আজানে
মন্দিরের ঘণ্টায় তীব্র অনাচারের আওয়াজ
আমাদের ব্যবহারে প্রকাশ প্রতিদিন সমাজে
সময় গড়িয়ে নিস্পৃহ বিকেল আসে এ পৃথিবীতে
.
৫
শূন্যতা নেই কোনো—
আছে শুধু কিছু কপটতা আর কিছু ভাণ।
জীবনের মিথ্যে খেলায় জুয়াচোর জিতে যায়!
নক্ষত্রেরা তালি দেয় আকাশে। আর কিছু মেঘ
জল হয়ে ঝরে পড়ে পৃথিবীর বুকে!
.
৬
বুকের ভেতর আদিগন্ত বিস্তার
সেখানে বাসা বেঁধেছে প্রণম্য বিরহ
তাকে ধার্য করে রাখি অকৃত্রিম আদরে
শুনশান দুপুরের নিরলস বিচারের প্রহসন
রক্ষা করে দিগন্তের সূর্য। সেই মুহূর্তটুকু শুধু
পার হয়ে যাওয়া; তারপর আনন্দ বিতান;
হু হু করে ছুটে আসবে অনাগত দিনের প্রত্যাশা
.
৭
অর্বাচীন সন্ধ্যেগাছ বিষ ছড়ায় পাতায় পাতায়
আগামী প্রাণগুলো দূষিত গলিত প্রায়!
অজগ্রামে নদী জলে ঝাঁপ দেয় দামাল ছেলেরা
কালের সাপ দেখি তাদেরও দংশায়!
বিশ্বজোড়া মৃত্যুর ফাঁদ;
.
আজ দেখি, ঈশ্বরও এক দূষণের নাম!
.
৮
জ্যোৎস্নায় পোড়া দেহ নিয়ে ছাদে ঘোরে
এক নিদ্রাহীন মানুষ
তার পোশাক অবিন্যস্ত, মুখে অপরিচ্ছন্নতা,
সে ছায়ামূর্তির মতো চলমান। হঠাৎই চাঁদ
ঢেকে মেঘ এলো আকাশজুড়ে। তা দেখে সে
ধীরে ধীরে শুয়ে পড়ে ছাদে। তার মুখে
খেলা করে অপার্থিব আলো। মেঘের
রাজ্যপাটে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল সে!
.
৯
বিপন্ন আলোর পিছু ধাওয়া করে সবাই।
মাঝরাতে শোনা যায় হাহাকার।
ভ্রূ কুঁচকে উঠে বসে এক নারী
তার হাতে ঝরে পড়ে মৃত্যুর অক্ষর
হাহাকার থেমে যায়
পৃথিবীর গভীর থেকে ওঠে ধ্বনি…
.
১০
হেরে যাওয়া মানুষ যে
তারও কিছু নিজস্ব উচ্ছলতা আছে, প্রেম আছে,
আছে কিছু অবাক বিকেল। যখন
রাত্রি নামে নিগূঢ় প্রত্যয়ে
আছে সেই রাত্রিযাপন। আরও আছে কিছু কিছু
লুকোনো সম্পদ! তাই কেউ কেউ ভালোবাসে
হেরে যায় আজীবন!
.
১১
গণিকার মতো পসরা সাজায় রাত্রি।
ঝরে পড়ছে বিবর্ণ পাতা। তুমি কি আসবে?
পুড়তে পুড়তে গলে যাচ্ছি আমি। অপেক্ষার
শিয়রে রাখা অপাবৃত হাত। যদি না আসো
তবে আরো অন্ধকার, অপেক্ষার শেষে এ
জীবন চলে যাবে ছন্নছাড়া জীবনের গ্রাসে।
.
১২
জলপথে নেমে আসে পরী
অত্যাগসহন তার রূপ
যে পিপাসা মানুষের, দোয়েলের, ফড়িং-এর
তার কাছে হেরে যায় সব প্রবজ্যা।
দিনান্তে দেখা দেয় চাঁদ।
নিজস্ব ছোবল নিয়ে ঘুরে মরে সাপ!
.
১৩
চিরকালীন মুহূর্ত, এই অপেক্ষা
বলতে পারো তোমার জন্য
সময় দীর্ঘ বেদনা দেয়; বসে থাকি
নিজেকে কখনো রাত্রির নদী মনে হয়
.
মুগ্ধতা-বিষাদ-যন্ত্রণা মথিত
কত রকম অনুভূতি
অন্তঃপুরে আকাঙ্ক্ষায় বসে থেকে
সহসা সবই ভ্রম মনে হয়
.
ভ্রমের মাধুর্য চিনে, চিরকালীন মুহূর্ত
আরো লুপ্ত হয়!
.
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
প্রয়াণগাথা : সুনীল শর্মাচার্য
মুক্তপদ্য
ইচিং বিচিং পদ্য : সুনীল শর্মাচার্য
গল্প
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প : সুনীল শর্মাচার্য
আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মতামত
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে
ভারতে চীনা দ্রব্য বয়কট : বিষয়টা হাল্কা ভাবলেও, সমস্যাটা কঠিন এবং আমরা
রাজনীতি বোঝো, অর্থনীতি বোঝো! বনাম ভারতের যুবসমাজ
ভারতে শুধু অমর্ত্য সেন নয়, বাঙালি সংস্কৃতি আক্রান্ত
ভারতের CAA NRC নিয়ে দু’চার কথা
ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা
১ thought on “কয়েকটি কবিতা”