Sahittya

Literature magazine | Bangla & english worldwide

Rural-memories

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

দাইবৌ বাচ্চা খালাস করতে এসেছে অবেলায়।

তার ঘোমটা খোলে না।

এই আবরণ

বাচ্চার কান্নায় সারা পাড়া কান খুলে দেয়

দাইবৌ তবু তার ঘোমটা খোলে না

তার হাতে বাঁশের চোতা

জন্মনাভি কেটে হাত রক্ত রক্তময়

সারা চোখে নতুন জাতকের জন্মের ঝিলিক।

সূর্য পাটে বসে। আম-জাম-দিনের কথা।

পুকুরের পাড় থেকে ঘরে ফিরেছে হাঁস

শোনা যায় তাদের প্যাঁক প্যাঁক…

দাইবৌ বলে, ত্বরা করো, ত্বরা করো

সন্ধে হয় হয়;

ঘরে ঘরে জ্বলে আশার প্রদীপ

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

দুই

এক সময় আমাদের গ্রামটা শেখচাচীর মতো ছিল।

বড়ঘরের মেয়ে, অপরূপ সুন্দরী, কিন্তু মাথায় সামান্য ছিট।

বয়স বাড়বার সঙ্গে সঙ্গে শেখচাচীর মাথার ছিট

পাগলামো থেকে উন্মত্ততায় গেল।

এখন সে বাড়ি থাকে না

এবং যে-কোনো দিন সে সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে পারে।

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

তিন

ঘর এবং পথের মাঝখানে তৃতীয় ভূমিতে জলের

একটি ফোঁটা।

তাড়িণীখুড়ো ভাবে : এসবের পাশে, ধুলোয় ধুলো

এই সংসার।

বাতাস ঘুরছে চক্রাকারে

গাছ থেকে পাতা ঝরছে গাছের গোড়ায়

তাড়িণীখুড়ো দেখে :

দূরে একটি সরীসৃপ নানা রঙে ফণা সাজিয়ে

গূঢ় চেয়ে আছে!

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

চার

মুক্তিযুদ্ধের শেষে ঘরে ফিরে কবি লিখতে কবিতা

হাতে কালির দাগ। রাত্রি জাগরণে

চক্ষুদুটি লাল। দীর্ঘ চুল নেমে এসেছে পিঠ-অব্দি,

মুখভরা দাড়ি।

একটি জীবন গেছে যুদ্ধে। কবিতা লেখায়—

বিষে ও অমৃতে।

পা দু’খানি হয়ে উঠেছে পাথর।

বড় তৃষ্ণা।

দীর্ঘ দীর্ঘ কান্নারা সাঁতরাচ্ছে বাতাসে।

চতুর্দিকে মৃত দেহ। মৃত অস্ত্র, মৃত অশ্রু।

শূন্যে ছুঁড়ে দিলেন কলমটিকে,

কাঁদলেন দাউদাউ করে

এইবার মুক্তিযোদ্ধা থেকে কবি হলেন।

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

পাঁচ

কালো রঙের সখিনাকে দেখলে

আমার রবীন্দ্রনাথের কৃষ্ণকলির কথা মনে পড়ে যায়।

কিন্তু ঘরভর্তি লোক থাকে

আলোচনা করে, টিভি সিরিয়ালে মগ্ন‌‌‌ সবাই।

টিভি দেখা শেষ হতে হতে রাত বাড়ে

গাঢ় অন্ধকারে ঘর বার একাকার

তখন তো আর সখিনাকে ডাকা যায় না।

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

ছয়

রাহিমা খালা কইলেন : যাত্রা নাস্তি।

এদিকে খালার বাপের বাড়ি যাওয়া প্রয়োজন—

ছোট ভাইয়ের বউয়ের বাচ্চা হবে, প্রথম পোয়াতি।

হৃষ্টপুষ্ট পাখি ডাকছে, নদীর জল

পুঁথি পড়ার মতো মৃদু শান্ত, আকাশ ভরা তারা

পানসুপারী মুখে দিয়ে চাঁদ।

বহুদিন পর এক পীর এসেছে। বিড়বিড় করে

দোয়া পড়ছে।

পীর জানতো না যে বড় নানা গত হয়েছেন;

বড় নানার আত্মার প্রতি শান্তির দোয়া-দরুদ

উচ্চারণ করলেন।

দাওয়ায় আজ পড়শীদের ভিড়

এ-বাড়ির মাথা খারাপ মেজবৌ

একখানি কাহিনি লিখে খবরের কাগজে পাঠিয়েছিল

তা আজ ছাপা হয়ে এসেছে।

তাতে এ-সংসার চিত্রিত হয়েছে।

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

সাত

আমাদের মজিদ খালু সাহসী মানুষ

সাদা রঙের জোব্বা পরে, হাতে তসবি

কাঁধে ঝোলা নিয়ে

একেবারে মধ্যরাতে শশুরবাড়ি এসে হাজির।

আমরা গভীর রাতে টের পেয়েছিলাম—

বজ্রনৌকা পদ্মখালে পড়ল।

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

আট

নদীর ধারে ঘোরে শেয়ার

এ-দুখের আখড়া এই মন।

মন বহে নিয়ে যায় বাউল-বায়ু।

ঘোমটায় বাঁকা কদম্বগাছ।

ওরে ও শেয়াল, তোর অনন্ত পিপাসা,

ঘরে তোর সংসারের কঙ্কাল।

এ-জীবনে কে কী পায় তা জানলি না!

নদীর ধারে ধারে ঘুরে সন্ধে হয়!

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

নয়

কবি অনেক ভেবেচিন্তে শেষ অব্দি

কবিতাকে কল্পনা করে নির্মাণ করলেন।

বললেন, ‘কবিতা, আমাকে মার্জনা করবেন।

আপনাকে কল্পনা করে দেওয়া ছাড়া আমার

কোনো উপায় ছিল না।’

কবিতা বললেন : জানি!

কবিতায় কল্পনা একান্ত জরুরি

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

দশ

ভাবছিলাম গ্রন্থখানির রচয়িতা কে, আমি জানি না।

গ্রন্থখানি একটি দেহতত্ত্বের উপাখ্যান

—এর বিন্দুবিসর্গ জানার উপায় নেই।

খুলে দেখলে সবকিছু মনে হয়।

এর কোনো প্রচ্ছদ নেই।

এক মৃত বৈরাগী একে তার ঝোলায় করে নিয়ে ঘোরে।

গরু-বাছুরের মতো নির্লিপ্ত দিন

তার পেছন পেছন রায়

যেন বৈরাগী কোনো আখড়ার তান্ত্রিক

শূন্য-জ্ঞান লাভের আশায় চলছে শিষ্যরা।

…………………

পড়ুন

কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ

লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

গল্প

উকিল ডাকাত : সুনীল শর্মাচার্য

এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প: সুনীল শর্মাচার্য

আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য

প্রবন্ধ

কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য

ধর্ম নিয়ে : সুনীল শর্মাচার্য

মুক্তগদ্য

খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য

কত রকম সমস্যার মধ্যে থাকি

শক্তি পূজোর চিরাচরিত

ভূতের গল্প

বেগুনে আগুন

পরকীয়া প্রেমের রোমান্স

মুসলমান বাঙালির নামকরণ নিয়ে

এখন লিটল ম্যাগাজিন

যদিও সংকট এখন

খাবারে রঙ

সংস্কার নিয়ে

খেজুর রসের রকমারি

‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে

মোবাইল সমাচার

ভালো কবিতা, মন্দ কবিতা

ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন

বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে

দাড়ি-গোঁফ নামচা

নস্যি নিয়ে দু-চার কথা

শীত ভাবনা

সম্পাদক

Jebunnahar Joni

জেবুননাহার জনি। Jebunnahar joni. কবি ও গল্পকার। জন্ম : ১১ জানুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ; পৈতৃকনিবাস মাদারীপুর। পিতা : আতাউর রহমান হাওলাদার, মাতা : নুরুননাহার খান। সমাজকল্যাণে বিএ সম্মানসহ এমএ। পেশা : শিক্ষকতা। লেখার বিষয় : কবিতা ও গল্প। প্রকাশিত গ্রন্থ : মেঘলা রাতে চাঁদ (গল্প, ২০০৭), বিরান পথের কাশবন (কবিতা, ২০১৭)। পুরস্কার : গাংচিল সাহিত্য পুরস্কার (২০১১), সমধারা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)।