Sahittya

Literature magazine | Bangla & english worldwide

Keane Bridge

Keane Bridge

ক্বীন ব্রীজ

সিলেটের সুরমা নদীর উপর লৌহ নির্মিত সেতুর নাম ক্বীন ব্রীজ (Keane Bridge)। সিলেট শহরের ‘প্রবেশদ্বার’খ্যাত এই স্থাপনাটি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে সকলের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত।

ক্বীন ব্রিজের আকৃতি অনেকটা ধনুকের ছিলার মতো বাঁকানো। ১৯৩৬ সালে ব্রিজটি নির্মিত হয়, দৈর্ঘ্য ৩৫০.৫২ মিটার (১১৫০ ফুট) এবং প্রস্থ ৫.৪ মিটার (১৮ ফুট)। সে-সময় এই ব্রিজটির নির্মাণ ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫৬ লাখ টাকা।

অবিভক্ত ভারতে আসামের ইংরেজ গভর্নর ছিলেন মাইকেল ক্বীন। তিনি উনিশ শতকের তিরিশ দশকে (১৯৩২ সালে) সিলেট সফরে আসেন। তখন আসামের সাথে সিলেটের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল ট্রেন। সে-সময় তিনি সুরমা নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।

তাঁর শামনামলেই ১৯৩৩ সালে ব্রিজ নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৯৩৬ সালে। মাইকেল ক্বীনের স্মৃতিকে ধরে রাখতে তাঁর নামেই ব্রিজটির নামকরণ করা হয়। স্মর্তব্য, তিনি ১৯৩২-১৯৩৭ সাল পর্যন্ত আসামের গভর্নর ছিলেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ডায়নামাইট দিয়ে ব্রিজের উত্তর পাশের একাংশ উড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর কাঠ ও বেইলি পার্টস দিয়ে সাময়িকভাবে মেরামত করা হয়। তখন হালকা যানবাহন চলাচল করতে পারত। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতায় ১৯৭৭ সালে ব্রিজটির বিধ্বস্ত অংশ কংক্রিট দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয়। তার পর থেকে পুরোদমে যানবাহন চলাচল শুরু করে।

লিখেছেন—জেবুননাহার জনি

Jebunnahar Joni
writer : Jebunnahar Joni
Jebunnahar Joni
writer : Jebunnahar Joni

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অন্যতম একটি বিভাগ ও জেলা শহর সিলেট। অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এর চারপাশ। এখানে রয়েছে নানা দর্শনীয় এবং ঐতিহ্যবাহী স্থান।

এই শহরের মধ্য দিয়েই বয়ে গেছে মমতাময়ী সুরমা নদী। সুরমা নদীর উৎপত্তিও বরাক নদীর মতো নাগা-মণিপুরের জল বিভাজিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় ঢাল থেকে। বরাক ভারতের আসাম রাজ্যের কাছাড় জেলার অমলশিদ নামক স্থানে সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম বদরপুরে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দু’টি পৃথক শাখায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর উত্তর দিকের শাখাটি নাম সুরমা।

এটি প্রথমে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে পরে সিলেট শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে চলে গেছে। এর পর উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে সুনামগঞ্জ শহরের পশ্চিমে গিয়ে পৌঁছেছে। অতঃপর নদীটি দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ অভিমুখী প্রবাহিত হয়ে মারকুলী নামক স্থানে পুনরায় কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।…

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক পথে ক্বীন ব্রিজের দূরত্ব প্রায় ২৪৬ কিলোমিটার এবং রেলপথে দূরত্ব প্রায় ৩১৯ কিলোমিটার। সিলেট শহরের যে কোনো স্থান থেকে সিএনজি, রিকশা বা অটোরিকশা দিয়ে সহজেই ক্বীন ব্রিজ যাওয়া যায়। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন হতে ক্বীন ব্রিজের দূরত্ব আধা কিলোমিটার। হেঁটেও যেতে পারেন।

ঢাকা থেকে সিলেট

ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটের বাস পাওয়া যায়৷ ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি ও এনা পরিবহনের এসি বাস যাতায়াত করে। ভাড়া জনপ্রতি ৮০০ থেকে ১১০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া আছে ঢাকা থেকে সিলেট যেতে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এনা পরিবহনের নন এসি বাস। ভাড়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।

ট্রেনে ঢাকা থেকে সিলেট যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেসে যেতে পারবেন।

এ ছাড়া ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও স্বাচ্ছন্দ্যে সিলেট যেতে চাইলে আকাশ পথে ও গমন করতে পারেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভোএয়ার এবং ইউএস বাংলা বেছে নিতে পারেন। তিনটি বিমানই নিয়মিতভাবে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকেও বাস, ট্রেন ও আকাশপথে সিলেট যাওয়া যায়। ট্রেনে যেতে পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস, এ-দুটি ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন চলাচল করে।

থাকবেন কোথায়

সিলেট শহরের লালা বাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরনের রুম পাওয়া যায়। এ ছাড়া হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা, কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্যানুযায়ী থাকতে পারবেন।

খাবেন কী

শহরের জিন্দাবাজার এলাকার পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টে সুলভ মূল্যে পছন্দমতো নানারকম দেশি খাবার খেতে পারেন। এসব রেস্টুরেন্টের বাহারি খাবার ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ। এ ছাড়া সিলেটের কেন্দ্রে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানেও আপনার পছন্দমতো খেয়ে নিতে পারবেন।

সিলেট শহরের আশপাশে আরো দর্শনীয় স্থান

সিলেট শহর ও এর আশপাশে আরো যে সকল স্থানে ভ্রমণ করতে পারেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার, হযরত শাহপরাণ (র.)-এর মাজার, মালনীছড়া চা বাগান, জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, লোভাছড়া, লালাখাল, পান্থুমাই ঝর্ণা, সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, আলী আমজাদের ঘড়ি, হাকালুকি হাওর, ভোলাগঞ্জ, ড্রিমল্যান্ড পার্ক, জাকারিয়া সিটি ইত্যাদি।

About The Author

সম্পাদক

Jebunnahar Joni

জেবুননাহার জনি। Jebunnahar joni. কবি ও গল্পকার। জন্ম : ১১ জানুয়ারি, নারায়ণগঞ্জ; পৈতৃকনিবাস মাদারীপুর। পিতা : আতাউর রহমান হাওলাদার, মাতা : নুরুননাহার খান। সমাজকল্যাণে বিএ সম্মানসহ এমএ। পেশা : শিক্ষকতা। লেখার বিষয় : কবিতা ও গল্প। প্রকাশিত গ্রন্থ : মেঘলা রাতে চাঁদ (গল্প, ২০০৭), বিরান পথের কাশবন (কবিতা, ২০১৭)। পুরস্কার : গাংচিল সাহিত্য পুরস্কার (২০১১), সমধারা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)।